দিনাজপুরে রাসায়নিক বর্জ্যে প্রায় ৫০ একর জমির ফসল নষ্ট
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে টিলিয়ন গোল্ড কারখানার চুল পোড়ানোর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও রাসায়নিক বর্জ্যমিশ্রিত পানির কারণে আমন ক্ষেত নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ওই এলাকার কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছে।
রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের দেবীগঞ্জ বাজারের সামনে অবস্থিত টিলিয়ন গোল্ড লিমিটেড কারখানাটি। এখানে প্রতিদিনের চুল পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের রাজাপাড়া, পাইকারপাড়া ও ফকিরপাড়ার মানুষের প্রায় অর্ধশত একর কৃষি জমির ফসল হলুদ হয়ে গেছে। এদিকে বিষাক্ত বর্জ্যের ফলে সেই এলাকার মৎস্য খামার মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।
ওই এলাকার কৃষক মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি, ধান পাকার সময় না হতেই ধানের গাছ হলুদ হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় পুড়ে কালো হয়ে গেছে। চুল কারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া এভাবে ধানের গাছে এসে লাগলে ধানগাছ মরে যাবে।’
ওই এলাকার কৃষক মুসলিম উদ্দিন, জিন্নাত আলী, শাহীনুর ইসলাম, সোহাগ ইসলামসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন, চুল কারখানার বর্জ্য ও কালো ধোঁয়া বন্ধ না হলে এই এলাকার মাটি চাষাবাদের অনুপোযোগী হয়ে পড়বে। হারিয়ে যাবে জমির উর্বরতাও।
স্কুলশিক্ষক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘কারখানায় প্রায় প্রতিদিনই বিকেলে চুল পোড়ানো হয়। আর এর ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আমন ক্ষেতসহ বাড়ির গাছপালা শাক-সবজির গাছ নষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া দূষিত বর্জ্যে খাল বিল পুকুরের পানি কালো হয়ে যাচ্ছে।’
ফতেজংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার নুর মোহাম্মদ লুনা বলেন, ‘কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধন করে ময়লা পানি বাইরে ছাড়ার কথা তাদের বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা শুধু সময় নিচ্ছে। কোনো রকম ব্যবস্থাও তারা করেনি। চুল পোড়ানোর ধোঁয়ায় ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সবার আগে কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। চুল কারখানার পানি নিষ্কাশন ও বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রতিরোধে অন্য কোনো মাধ্যম অবশ্যই তৈরি করতে হবে। ধান গাছের সবুজ অংশ চারাকে বাঁচিয়ে রাখে। চারা হলুদ হয়ে গেলে ওই গাছকে সবল করা মুশকিল হয়ে পড়বে।’
এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা সিদ্দীকা বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সশরীরে গিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’