অসময়ে তরমুজ চাষ, সফলতার হাতছানি
অসময় তরমুজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার নাফানগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের প্রভাষকসহ চার ব্যক্তি। ইউটিউবে তরমুজের চাষ দেখে আবাদ শুরু করেন মো. হুমায়ুন জলিল নামের ওই প্রভাষক।
দুই মাসে ব্ল্যাক বেবি তরমুজটি চাষে ভালো ফলন ধরে এবং বিক্রয় করা যায়। এই তরমুজ বারো মাসই আবাদ করা যায়। জমিতে ছোট-বড় হাজার হাজার তরমুজ মাচায় মাচায় বাতাসে দুলছে। যেদিক চোখ যায় মাচায় মাচায় দুলছে ব্ল্যাক বেবি জাতের এই তরমুজ।
সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তরমুজ চাষ করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। তাঁদের এই তরমুজ চাষের ফলে কিছু বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জানা যায়, ব্ল্যাক বেবি তরমুজের জাতটি ভারতের। বাংলাদেশে প্রথম চুয়াডাঙ্গায় এর চাষ হয়। এরপর জয়পুরহাট, মেহেরপুর ও ঢাকার ধামরাইয়ের চাষিরাও এই তরমুজ চাষ করেন। এটি আগে থেকেই ‘ব্ল্যাক বেরি’ নামে পরিচিত।
প্রভাষক মো. হুমায়ুন জলিল বলেন, ‘শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময় বসে না থেকে ইউটিউবে দেখে তরমুজ আবাদ করার পরিকল্পনা করি। আমরা চারজন মিলে এই তরমুজ আবাদের পরিকল্পনা করি। চলিত বছরে ফেব্রুয়ারির দিকে উপজেলার ২ নম্বর ইশানিয়া ইউনিয়নের বকুতলায় তিন একর জমি লিজ নিয়ে আমরা তরমুজ চাষ শুরু করি। তরমুজ চাষ শুরু করার পর আমাদের এখানে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন নারী-পুরুষ কাজ করছে। যাতে কিছু বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
প্রভাষক হুমায়ুন জলিল আরো বলেন, ‘তরমুজ চাষে প্রথম ধাপে খরচ হয় প্রায় সাত লাখ টাকা। বিক্রয় করা হয় প্রায় আট লাখ টাকা। প্রথম ধাপে খরচ একটু বেশি হয়। কারণ মাচায় করতে হয়। আমরা মাঠ থেকে প্রতিকেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি। ব্ল্যাক বেবি তরমুজগুলো সাধারণত তিন থেকে চার কেজি ওজনের হয়। তরমুজ চাষ দেখাশুনার জন্য চুয়াডাঙ্গা থেকে একজন দক্ষ লোক আনা হয়েছে। তিনি আমাদের এখানে সার্বক্ষণিক দেখামোনা করেন।’
এক প্রশ্ন উত্তরে ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমার এখানে এখন পর্যন্ত উপজেলা থেকে কোনো কৃষি কর্মকর্তা আসে নাই। মাঠ পর্যায়ে একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন। উনি মাঝে মধ্যে দেখতে আসেন। আমরাও কোনোদিন উপজেলা কৃষি অফিসে যাইনি। কারণ আমি ইউটিউব দেখে তরমুজের পরিচর্যা করি।’
প্রভাষক হুমায়ুন জলিল আরো বলেন, ‘বোচাগঞ্জ উপজেলায় বারোমাসি তরমুজটি ব্যাপকহারে চাষ বাড়বে আমরা আশা করছি।’
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা তরমুজ গাছের পরিচর্যাকারী ছামাদ আলী বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আমাদের এলাকায় তরমুজ চাষাবাদে কাজ করছি। আমাদের এলাকায় এসব তরমুজ চাষ হয় ব্যাপকভাবে। তবে বোচাগঞ্জ উপজেলায় আমি প্রথম এসেছি। এখানে এই তরমুজ চাষ কম।’
শ্রমিক মজিবুর ইসলাম বলেন, ‘আমি দুই বছর বিদেশে ছিলাম। বিদেশ থেকে এসে ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করছিলাম কিন্তু দেশে করোনাভাইরাস আসার পর বাড়িতে চলে আসি। তারপর থেকে এই তরমুজ বাগানে কাজ করছি। কাজ করার ফলে আমার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যা প্রতি মাসে প্রায় নয় হাজার টাকার মতো আয় করতে পারি।’
বোচাগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আরিফ আফজাল জানান, বোচাগঞ্জ উপজেলায় সাড়ে ১৩ হেষ্টর জমিতে ব্ল্যাক বেবি তরমুজ আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু উপজেলার বকুলতলা, ডহরা, নাফানগর এলাকায় কৃষকরা ব্ল্যাক বেবি তরমুজটি আবাদ করছে। ব্ল্যাক বেবি তরমুজের বীজ ভারত থেকে আসে।’ এক প্রশ্ন উত্তর তিনি বলেন , ‘এখন পর্যন্ত কোনো তরমুজ চাষি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা যদি তাদের সমস্যার কথা আমাদের না বলে। আমরা কীভাবে বুঝব? তাদের সমস্যার কথা আমাদের বললে অবশ্যই উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।’
এ ব্যাপারে বোচাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছন্দা পাল বলেন, ‘উপজেলায় তরমুজ চাষের সফলতা দেখা দিয়েছে। এ অঞ্চলের জলবায়ু, মাটি তরমুজ চাষে উপযোগী হয়ে উঠেছে। তরমুজ আবাদে আরো অনেকে এগিয়ে আসবে বলে আমি মনে করছি। পাশাপাশি কিছু নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে কিছু মানুষের বেকারত্ব দূর হবে বলে মনে করি।’
মাচার পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা পাওয়ায় বোচাগঞ্জে ব্ল্যাক বেবি তরমুজ চাষের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে এলাকার মানুষ।