টেলিভিশনে দেখে আগ্রহ, অসময়ে তরমুজ চাষে সাফল্য
শহরের মানুষের পাশাপাশি প্রান্তিক জীবনেও পরশ ছড়াচ্ছে আধুনিক চিন্তাচেতনা। এই চিন্তাধারার ছোঁয়াই এনেছে কৃষিভিত্তিক নানামুখী পরিবর্তন। তেমনি একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন উপকূলীয় জেলা বরগুনার কৃষক আবদুল মান্নান। টেলিভিশনে দেখে আগ্রহ প্রকাশ, অতঃপর অসময়েই মাচায় তরমুজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি।
জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার কালিরতবক গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নানের ছোট ছেলে বনি আমিন। অনেক বছর ধরেই তরমুজ পরিবহণের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। একদিন তিনি টেলিভিশনে দেখলেন মাচায় তরমুজ চাষ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন। অনুপ্রাণিত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন তার বাবা কৃষক আবদুল মান্নান ও বড় ভাই আবদুল আলীমের সঙ্গে। বাবা ও ভাইকে দেখান টেলিভশনের সেই প্রতিবেদনটি।
ছেলের মুখ থেকে শুনেই বিষয়টি ভালো লাগে কৃষক মান্নানের। কিন্তু সনাতনী প্রথায় চাষ অভ্যস্ত একজন কৃষক কি পারবে নতুন পদ্ধতিতে চাষ করতে? এমন চিন্তা ভর করে তার মাথায়। তবুও শেষমেষ ছেলেদের অনুপ্রেরণায় তরমুজ চাষের পরিকল্পনা নেন তিনি।
পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষ শুরু করেন তারা। খামারটি প্রতিষ্ঠার পেছনে আবদুল মান্নানের স্ত্রী রোফেজা বেগমও দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। তাদের এ তরমুজ চাষ অসময়ে হলেও প্রথমবারেই সাফল্যের মুখ দেখেন তারা।
সাধারণত শীতকালে বরগুনার বিভিন্ন এলাকার জমিতে তরমুজের বীজ বপন করা হয়। এ চাষের ফসল বিক্রি হয় গ্রীষ্মকালে। কিন্তু মান্নান চলতি বছরে এপ্রিল থেকে শুরু করে জুন অর্থাৎ বর্ষাকালে ৮০ শতাংশ জমিতে সরাসরি বীজ বপন করেন। বেঈল টাইগার, কারিশমা ও কানিয়া জাতের তরমুজের বীজ লাগান তিনি। বৃষ্টির পানিতে বীজ যেন পঁচে নষ্ট না হয় সেজন্য উন্নতমানের পলিথিন ব্যবহার করেন। যার ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে চারা বেরিয়ে আসে।
বর্তমানে মাচায় তরমুজ ঝুলছে। প্রতিটি তরমুজ পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজনের। লাল ও হলুদ রঙের এ তরমুজগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও সুস্বাদু।
মাচায় তরমুজ চাষ করে দ্বিগুন লাভের কথা ভাবছেন জানিয়ে কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, ‘অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষের কথা শুনে অনেকেই পাগলামি বলে ভেবেছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। তাঁরা সঠিক পরামর্শ দেয়। পরে তাদের দেখানো পদ্ধতি প্রয়োগ করে জমিতে বীজ বপন ও পরিচর্যা করে আমরা সফল হই।’
মাচায় তরমুজ চাষ করে আবদুল মান্নানের সফলতা দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন মানুষ তার ক্ষেত দেখতে আসছেন। তাদের দেখে স্থানীয় কৃষক বাবুল সিকদার, ছিদ্দিক মেম্বার, মো. নিজাম ও নজরুলসহ আরও অনেকে মাচায় তরমুজ চাষ করার কথা ভাবছেন।
বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মাচায় তরমুজ চাষে উৎপাদন খরচ খুব একটা বেশি না। তবে নিয়মিত খেতের যত্ন নিতে হয়। নতুন এই পদ্ধতি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে একদিনে যেমন তরমুজ সারা বছর পাওয়া যাবে অন্যদিকে চাষিরা লাভবান হবেন।’
অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষের কথা শুনে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান সস্ত্রীক খামারটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি এ উদ্যোগকে অনুপ্রাণিত করার জন্য কয়েকটি তরমুজও ক্রয় করেন।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এখানে যে নতুন উদ্যোগে নতুন প্রযুক্তিতে অসময়ে তরমুজ চাষ ও অন্যান্য কৃষি কাজ শুরু হয়েছে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। তাঁর এমন চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই তরমুজ চাষের পরিকল্পনা নিয়েছেন। এভাবেই বাংলাদেশের কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছে।’