জঙ্গিবাদের সমাধান সহজে সম্ভব নয় : আবুল বারকাত
দেশে ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী জঙ্গিবাদ যে আকার ধারণ করেছে তার সমাধান খুব সহজে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী ও জঙ্গিবাদের গডফাদারদের বিচারকাজ সম্পন্ন করাসহ জঙ্গি অর্থায়নের উৎসমুখ বন্ধ করার মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।
আজ শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে মৌলবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি ও জঙ্গিবাদ : মর্মার্থ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে আবুল বারকাত এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় আবুল বারকাত বলেন, বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতির বার্ষিক নিট মুনাফা ২০১৪ সালে ছিল প্রায় দুই হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। আর স্বাধীনতার পর চল্লিশ বছরে মৌলবাদের অর্থনীতির পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকার হিসাব দিয়ে তিনি জানান, এই মুনাফার ২৭ শতাংশ আসে ব্যাংক বীমা থেকে, ১৯ শতাংশ থেকে আসে এনজিওগুলো থেকে, ১১ শতাংশ ওষুধশিল্প, হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে, ১০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, ৯ শতাংশ রিয়েল স্টেট ব্যবসা থেকে, ৮ শতাংশ মিডিয়া ও আইটি থেকে, প্রায় ৮ শতাংশ পরিবহন ব্যবসা থেকে।
আবুল বারকাত বলেন, ‘বাংলাদেশের সমগ্র অর্থনীতিতে অর্থনীতির সাম্প্রদায়িকীকরণ মাত্রা কত? এটা সরকারের উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ৬ শতাংশ। এটা সরকারের উন্নয়ন বাজেটে অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রায় ৯ শতাংশ। গত ৪০ বছরের পুঞ্জীভূত মুনাফা বর্তমান সরকারের বাজেটের সমপরিমাণ। মূলধারার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশ, মৌলবাদীদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ। মূলধারার অর্থনীতির মধ্যে তার অবস্থান ছোট হলেও প্রবৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় একসময় তা গ্রাস করবে।’
বারকাতের মতে, জঙ্গিবাদের সমস্যার সমাধানে মৌলবাদের এই অর্থনীতির বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে প্রয়োগ করে সুসংগঠিত জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে উদ্ধত। তাঁরা সৃষ্টি করেছে মূলধারার রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র, মূলধারার সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার, মূলধারার অর্থনীতির মধ্যে আরেকটি অর্থনীতি। ধর্মকে বর্ম অথবা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতার এই কৌশল আসলে ধর্মের পৌরাণিকের সঙ্গে বাস্তবের সম্মিলন যা ধর্মকে রাজনৈতিক মতাদর্শে রূপান্তরিত করে। আর ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক মতাদর্শ ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত।’