আপনার জিজ্ঞাসা
সাম্প্রদায়িকতা-ধর্মনিরপেক্ষতা কী
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তরের অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৩১তম পর্বে ওমান থেকে পাঠানো চিঠিতে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানতে চেয়েছেন সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে। অনুলিখন করেছেন মুন্সী আব্দুল কাদির।
প্রশ্ন : সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝানো হয়?
উত্তর : এ প্রশ্নটি মূলত একাডেমিক প্রশ্ন। সাম্প্রদায়িকতা বলতে সহজ কথায় বোঝায় সুনির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের জন্য গোড়ামি এবং সীমা লঙ্ঘন করা। এটাকেই মূলত সাম্পদায়িকতা বলে এবং তা প্রযোজ্য হয় একটা সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে। সেটা গোষ্ঠিভিত্তিকও হতে পারে, আবার অঞ্চলভিত্তিকও হতে পারে। আর সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে উগ্রতা ও গোড়ামি থাকবেই। যেহেতু সেখানে বিদ্বেষ থাকে, যেমন- আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা করেছে, তাই এটা হালাল। অন্যদের বিপক্ষে আমি যাবই। এই যে গোড়ামি এটাকেই সাম্প্রদায়িকতা বলা হয়ে থাকে।
এরপর আসে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা। ধর্মনিরপেক্ষতার সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে ইহজাগতিকতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার কনসেপ্টটা মূলত ইহজাগতিকতাকেই বোঝায়। শুধু বস্তুবাদী ধ্যানধারণা নিয়েই ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সেখানে পরকালে বিশ্বাসের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এর বহু ডেফিনেশন বের হয়েছে। একেকজন একেক সময়ে একেক প্রেক্ষাপটে একেক পরিস্থিতিতে এর ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। তবে আমি যে ব্যাখ্যাটি উল্লেখ করলাম সেটা সিভিলাইজেবল ব্যাখ্যা। এটা অক্সফোর্ডসহ বিভিন্ন ডিকশনারির মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে যদি একটা মতবাদ হিসেবে বা দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তাহলে দেখা যায় যে, এতে পারলৌকিক জীবনের যে বিষয় বা জান্নাত-জাহান্নামের বিষয়টি সেগুলোকে একেবারেই ইগনোর করা হয়েছে। তাই এর সাথে ঈমান রাখার কোনো বিষয়ের সম্পর্ক থাকে না।
আবার ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে ব্যক্তিগত একটি ব্যাখ্যা দেন যে, যার যার ধর্ম সে সেটা পালন করবে। এটা তো ইসলামসম্মত বিষয়। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার এই সংজ্ঞা কোনো যুগে কোনো স্কলার দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। এটা আমরা নিজেরাই কেউ কেউ তৈরি করেছি। যদি ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কেউ এই কনসেপ্ট বোঝায় যে, প্রত্যেকে যার যার নিজস্ব ধর্ম পালন করবে যখন কোনো ভূখণ্ডে একাধিক ধর্মের অনুসারিরা বসবাস করবে। তাহলে এটা একেবারেই একসেপটেবল একটি বক্তব্য। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে এটা কোনো গর্হিত বক্তব্য নয়।
মদিনার সনদেই আমরা এটা দেখেছি, রাসুলের সময়েও আমরা দেখেছি যার যার ধর্ম সে সে পালন করেছে। তবে পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা যেখানেই প্রতিষ্ঠা হয়েছে তার কোথাওই এই ধরনের কোনো অবস্থান আমরা দেখিনি, বরং ধর্মনিরপেক্ষতা সবচেয়ে প্রথম অবস্থান নিয়েছে ইসলামের বিরুদ্ধে, ঈমানের বিরুদ্ধে।
সর্বপ্রথম কামাল আতাতুর্ক যখন তুরস্কে এই বিষয়গুলো নিয়ে বক্তব্য দেন এবং সেখানে ইসলামকে কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে সম্পূর্ণরুপে সমূলে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে এবং করা হয়েছে।