মিয়ানমারে বিক্ষোভ ঠেকাতে ‘যুদ্ধাস্ত্র’ ব্যবহার হচ্ছে : অ্যামনেস্টি
মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ‘যুদ্ধক্ষেত্রের অস্ত্র’ ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহিংসতার ভিডিও ও ছবি পর্যালোচনা করে আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায় সংগঠনটি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলছে, মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর যে ‘কৌশলগত ও পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ চালানো হচ্ছে, তার ভিজ্যুয়াল প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ রয়েছে। এ ছাড়া এই সহিংসতা ঠেকাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস এভিডেন্স ল্যাব মিয়ানমারে চলমান বিক্ষোভের ৫০টিরও বেশি ভিডিও যাচাই করে বলছে, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভ ঠেকাতে ‘পরিকল্পনামাফিক ও পদ্ধতিগত কৌশল’ ব্যবহার করছে। অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট যে মিলিটারিরা যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য উপযুক্ত অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত রয়েছে।
এদিকে, গত সোমবার রাতভর তুমুল উত্তেজনা-উৎকণ্ঠার পর গত মঙ্গলবারও মিয়ানমারের একাধিক শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে অভ্যুত্থানবিরোধীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী আন্দোলনকারীদের দমনের পাশাপাশি এবার গণমাধ্যমের লাইসেন্স বাতিল করা শুরু করেছে। এদিকে, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পরিচালিত ব্যবসায় আরও বৃহৎ পরিসরে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বাড়িতে তৈরি ঢাল আর সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে গত মঙ্গলবার মান্দালয়ের রাস্তায় সক্রিয় হয় অভ্যুত্থানবিরোধীরা। প্রাণ যাওয়ার ভয় উপেক্ষা করে এক মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এসব মানুষের দাবি, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পতন। স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে তিন আঙুল উঁচিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্দেশ করছেন তাঁরা।
গণতন্ত্রের জন্য শোভাযাত্রা হয়েছে দাওইসহ আরও বেশ কয়েকটি শহরে। তবে মঙ্গলবার বড় কোনো সংঘাতের খবর না এলেও সোমবার রাতে ইয়াঙ্গুন ছিল উত্তাল। এদিন কয়েকশ নারী বিক্ষোভকারীকে একটি ভবনে আটকে রাখার প্রতিবাদে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নামেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। তবে চাপের মুখে মঙ্গলবার সকালে আটকে রাখা আন্দোলনকারীদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের রেশ দমিয়ে রাখতে সেনারা প্রথমবারের মতো নিশানা করেছে গণমাধ্যমকে। এরই মধ্যে অন্তত পাঁচটি গণমাধ্যমের অনুমোদন বাতিল করেছে সেনা সরকার।
সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল ও বিক্ষোভকারীদের দমনপীড়নের প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পরিচালিত ব্যবসায় বিস্তৃত আকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কূটনীতিক ও দুটি অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য ফাঁস করেছে। নথি থেকে জানা গেছে, সেনা পরিচালিত মিয়ানমার ইকোনোমিক হোল্ডিংস লিমিটেড ও মিয়ানমার ইকোনোমিক করপোরেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পর থেকে দেশটিতে চলছে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ। রক্তক্ষয়ী এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক এবং আহত হয়েছেন অনেকে। সেনা অভ্যুত্থানের অবসান এবং দেশটির নেত্রী অং সান সু চিসহ সামরিক বাহিনীর হাতে আটক রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমারে বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৬ জনের বেশি। তবে, অন্যান্য প্রতিবেদনে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চলমান বিক্ষোভের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন ছিল গত ৩ মার্চ। মিয়ানমারের বিভিন্ন নগর ও শহরে সেদিন ৩৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন।