রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণবাহী নৌকায় বোমা হামলা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ে যাওয়া ত্রাণবাহী নৌকাকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির পক্ষ থেকে ত্রাণ নিয়ে নৌকাটি রাখাইন রাজ্যে যাচ্ছিল।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে রেডক্রসের কর্মীরা রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতেতে ত্রাণসামগ্রী নৌকায় তুলছিলেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে সেখানে হাজির হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন শতাধিক বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁরা নৌকাটিকে বাধা দেন এবং নৌকাটি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে মারেন।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অবস্থান নেন প্রায় ২০০ পুলিশ সদস্য। এসময় কয়েকজন আহতও হন।
আরাকানের সহিংসতাপ্রবণ উত্তরাঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিল নৌকাটি। যেখানে সেনাবাহিনীর অত্যাচারে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে তারা। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, যেসব রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালাচ্ছে এবং যারা আরাকানে আছে তাদের উভয়েরই সহায়তা দরকার।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ওই জনতার দলটি ভেবেছিল এই ত্রাণ শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বৌদ্ধ ধর্ম প্রধান দেশটিতে মুসলিম রোহিঙ্গারা জাতিগতভাবেই সংখ্যালঘু। মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও রাজি নয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, রোহিঙ্গারা অবৈধ অভিবাসী।
মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিন মং রয়টার্সকে বলেন, শতাধিক মানুষ রুদ্রমূর্তি ধারণ করে ওই নৌযানটির গতিরোধ করেন। তাঁরা মনে করেছিলেন এই সব ত্রাণ ‘বাঙালি’দের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ নামেই অভিহিত করা হয় বলেও বিবিসির ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, ঘটনাটি সম্পর্কে স্বীকার করলেও এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি আইসিআরসির মুখপাত্র গ্রাজিয়েলা লেইটে পিকলি।
রাখাইন রাজ্যে আগেও জাতিগত সহিংসতা হয়েছে। সাম্প্রতিক সংকট শুরু হয় গত ২৫ আগস্ট। সেখানে চালানো সেনাবাহিনীর হামলার কারণে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে পাঠ্যপুস্তকে জাতিগত নিধনের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করার কথা বলেছে।