অভিশংসনের মুখোমুখি মুগাবে
সপ্তাহব্যাপী চলা রাজনৈতিক সংকটের পর এবার জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁরই নিজ দল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন- প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (জেডএএনইউ-পিএফ)।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টে এই অভিশংসনের প্রস্তাব তুলবে দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটি। গত সোমবার মুগাবের পদত্যাগের জন্য দলটির পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়।
গত বুধবার এক ‘রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের’ মধ্য দিয়ে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ‘মুগাবেকে ঘিরে থাকা অপরাধীদের’ বিরুদ্ধেই এ অভিযান বলেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথমে দাবি করা হয়। পরে জেডএএনইউ-পিএফ পার্টির পক্ষ থেকে মুগাবেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু পদত্যাগের পথে পা বাড়াননি তিনি। তারপরই দলটির পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
জেডএএনইউ-পিএফ পার্টির নেতা পল মাংওয়ানার বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, মুগাবের অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দুদিন সময় লাগতে পারে। বুধবারের মধ্যেই তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানো হতে পারে।
তবে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ৯৩ বছর বয়সী এই নেতাকে অভিশংসনের জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। দেশটির পার্লামেন্টের দুটি কক্ষ-সিনেট ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনুষ্ঠিত হবে ভোটাভুটি। আর দুটি কক্ষেই অভিশংসনের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট থাকতে হবে।
ভোটের আগে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে মুগাবের অভিশংসন আদৌ যৌক্তিক কি না, তা খতিয়ে দেখবে পার্লামেন্টের দুই কক্ষের একটি যৌথ তদন্তকারী দল।
বিবিসি জানায়, মুগাবেকে সংসদীয়ভাবে অভিশংসন করা হলে দায় এড়াতে পারবে জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী। কারণ তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার দিকে আঙুল তোলা হবে না। আর এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেন দেশটির বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেলেকেজেলা এমফোকো।
এদিকে, দীর্ঘ ৩৭ বছর শাসন ক্ষমতায় থাকা মুগাবের সিংহাসনহীন জীবন কেমন কাটবে তার একটি ছক কেটে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জিম্বাবুয়ে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া মুগাবের হাতে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যাঙ্গাগুয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
সম্প্রতি ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যাঙ্গাগুয়াকে বরখাস্ত করে অর্ধেকের কম বয়সী স্ত্রী গ্রেসকে উত্তরসূরি করা নিয়ে মুগাবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ক্ষমতাসীন দলের। আর সেই সুযোগে ভাইস প্রেসিডেন্টের পক্ষ নিয়ে সেনাবাহিনী চলে আসে ক্ষমতার কেন্দ্রে।
ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়েকে স্বাধীন করেছিলেন মুগাবে। তখন থেকেই তিনি দেশটির ক্ষমতায় আছেন। এ সময়ে ‘আফ্রিকার রুটির ঝুড়ি’ হিসেবে খ্যাত দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। এর জন্য স্বল্পসংখ্যক শ্বেতাঙ্গের হাতে থাকা দেশটির বৃহৎ জমি সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার ‘ভূমি-নীতি’কে দায়ী করা হয়।