মক্কায় ট্র্যাজেডি নতুন নয়
প্রতিবছর সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে হজ পালন করতে যান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখো মুসল্লি। তবে গত কয়েক বছরে মক্কায় তীর্থযাত্রীরা বেশ কিছু দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। আর এসব ঘটনার বেশির ভাগই ঘটেছে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা এবং তীর্থযাত্রীদের প্রবল চাপের কারণে।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মিনায় পদদলিত নিহত হয়েছেন৭১৭ জন হাজি। আহত রয়েছেন আরো অন্তত ৮০৫ জন।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের রাজকীয় মসজিদ আল-হারামে দুর্ঘটনা ঘটে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত একটি ভারি ক্রেন মসজিদের ওপর ভেঙে পড়ে। এতে ১০৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সৌদি আরবের বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ২৩০ জনের বেশি।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য অবশ্য পালনীয় একটি কর্তব্য হলো হজ। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সামর্থ্যবান মুসলমানের জীবদ্দশায় একবার অবশ্যই হজ পালন করতে হয়। হজকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণজমায়েত বিবেচনা করা হয়। প্রতি চন্দ্রবছরে ইসলামিক দিনলিপি অনুসারে হজের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ বছর হজের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
গতকালের দুর্ঘটনার আগে ২০০৬ সালের ১২ জানুয়ারি আরেক দুর্ঘটনা ঘটে মক্কায়। সেদিন জামারাত সেতু থেকে নামার সময় পদদলিত হয়ে মারা যান অন্তত ৩৪০ জন তীর্থযাত্রী। এ সময় আহত হন আরো অন্তত ২৯০ জন।
মিনায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে প্রতীকী ঢিল ছোঁড়ার আনুষ্ঠানিকতা পালনের পরে তীর্থযাত্রীদের প্রবল চাপে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সে বছর সারা বিশ্ব থেকে ২.৫ মিলিয়ন মানুষ হজপালনে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।
২০০৬ সালের এই ঘটনার পর মিনায় তিনটি শয়তানকে পাথর ছোঁড়ার আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য শয়তানের প্রতিনিধিত্বমূলক স্তম্ভ ও জামারাত সেতুটি পুনর্নিমাণ করা হয়। সেতুটি অধিক সংখ্যক স্তম্ভ দিয়ে মজবুত ও প্রশস্ত করে বানানো হয়। এখন ওই সেতুটি দিয়ে শয়তানকে পাথর মারার স্তম্ভগুলো পর্যন্ত পৌঁছানো অনেক সহজ হয়ে গেছে।
ইউএস টুডে তাদের এক প্রতিবেদনে হজে যত দুর্ঘটনা হয়েছে সে সম্পর্কে জানিয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ : শয়তানকে ঢিল ছোড়ার আনুষ্ঠানিকতায় হুড়োহুড়িতে ২৫১ জন হজযাত্রী মারা যান। আহত হন ২৪৪ জন।
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ : একই আনুষ্ঠানিকতা পালনের সময় ১৪ জন মারা যান।
৫ মার্চ, ২০০১ : শয়তানকে পাথর মারার আনুষ্ঠানিকতা পালনের সময় পদদলিত হয়ে মারা যান ৩৫ জন হজ্জ পালনকারী।
৯ এপ্রিল, ১৯৯৮ : জামারাত সেতুতে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ১১৮ জন নিহত ও ১৮০ জন আহত হন।
২৩ মে, ১৯৯৪ : শয়তানকে ঢিল ছোড়ার আনুষ্ঠানিকতায় মারা যান অন্তত ২৭০ হজ পালনকারী।
২ জুলাই, ১৯৯০ : মক্কা থেকে হেঁটে যাওয়ার একটি টানেলের মধ্যে পদদলিত হয়ে মারা যান এক হাজার ৪২৬ জন হজ পালনকারী।