গ্যাবনে নির্বাচনের ফল বাতিল, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল
মধ্য আফ্রিকার দেশ গ্যাবনে জাতীয় নির্বাচনের ফল বাতিল করে ক্ষমতা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির এক দল সামরিক কর্মকর্তা। আজ বুধবার (৩০ আগস্ট) সকালে গ্যাবনের নির্বাচনি সংস্থা প্রেসিডেন্ট আলি বঙ্গো ওন্দিম্বাকে তৃতীয় মেয়াদে জয়ী ঘোষণা করে। এর পরপরই ১২ সেনা কর্মকর্তার একটি দল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয়। খবর আলজাজিরার।
গ্যাবন২৪ টিভি চ্যানেলে এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘দায়িত্ব-জ্ঞানহীন, অপ্রত্যাশিত শাসনব্যবস্থার ফলে সামাজিক সংহতির ক্রমাগত অবনতি ঘটছে, যা দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে… আমরা বর্তমান শাসনের অবসান ঘটিয়ে শান্তি রক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গ্যাবন সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
গ্যাবনের সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সেনারা। দেশটির সেনাদের গঠিত ‘প্রতিষ্ঠান রূপান্তর ও পুনরুদ্ধার কমিটির’ পক্ষে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে।’
গ্যাবনের যারা ক্ষমতা দখলকারী সেনা কর্মকর্তাদের দাবি, দেশ এখন ‘সুখের সড়কে’। লিব্রেভিল তাদের (গ্যাবনের রাজধানী) ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের’ প্রতি যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা তারা রক্ষা করবে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে লিখিত বিবৃতি পড়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জনসাধারণ, গ্যাবনে থাকা অন্যান্য সম্প্রদায় ও গ্যাবনিজ প্রবাসীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানাই। আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্যাবনের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।’
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, জোটের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা গ্যাবনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।
টলেডোতে ইইউ প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের একটি বৈঠকে বোরেল বলেন, ‘এটি সত্য হলে, আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান সমগ্র অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়াবে। পুরো এলাকা, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র থেকে শুরু করে মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, এখন সম্ভবত গ্যাবন—খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।’
‘সেখানে কী ঘটছে এবং কীভাবে আমরা এই দেশগুলোর বিষয়ে আমাদের নীতি সমন্বয় করতে পারি, সে সম্পর্কে মন্ত্রীদের গভীর চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এটি ইউরোপের জন্য একটি বড় সমস্যা’, বলেন বোরেল।
কেনিয়ার নাইরোবি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ক্যাথরিন সোই জানান, গ্যাবনে রাস্তায় নামতে শুরু করেছে মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকেই উদযাপন করছে। বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আলি বঙ্গো কোথায় আছেন জানা যায়নি। সেনাবাহিনী তাঁকে আটক করেছে কি না, তা-ও জানানো হয়নি।
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন বলেছেন, প্যারিস গ্যাবনের ঘটনাগুলোকে ‘সর্বাধিক মনোযোগের সঙ্গে’ পর্যবেক্ষণ করছে।
প্রেসিডেন্ট আলি বঙ্গো ওন্দিম্বার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ‘সব পক্ষের’ প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘আমরা গ্যাবনের সব পক্ষকে দেশ ও জনগণের মৌলিক স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসার, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসন ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এছাড়া ‘প্রেসিডেন্ট বঙ্গোর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার এবং জাতীয় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার’ আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াং ওয়েনবিন।