তাপদাহে বিপর্যস্ত নীলফামারীর জনজীবন, বেড়েছে রোগী
আষাঢ়ের তাপদাহে বিপর্যস্ত নীলফামারীর জনজীবন। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন কম। যদিওবা কেউ বের হচ্ছেন, তবে ছাতা ব্যবহার করে আসছেন ঘরের বাইরে। অন্যদিকে মাঝারি এই তাপদাহে উপার্জনে প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষদের। গেল কয়েকদিনে প্রকৃতির বিরুপ আবহাওয়ায় নিষ্পেষিত হচ্ছে উত্তরের জেলাগুলোর মানুষ।
তবে আবহাওয়া বিভাগ বলছে, এমন পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। এরমধ্যে বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা শহরের বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা পরিবহণ ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ জানান, রোদের প্রখরতায় মানুষ ঘরেও থাকতে পারছে না। দিনে যেমন গরম রাতেও তেমন। ঠিকমতো ঘুমও হচ্ছে না রাতে।
সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রেলস্টেশন এলাকার অটোরিকশাচালক মোকলেছুর রহমান জানান, শহরে মানুষজন তেমন নেই। যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সে কারণে উপার্জন কমে গেছে।
৬০ বছর বয়সী রিকশাচালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এ রকম গরম আগে তো ছিল না। গরিব মাইনসির সবপ্যাকে বিপদ। পানি হইলেও সমস্যা, গরম হইলেও সমস্যা, ঠান্ডা হইলেও সমস্যা। হামরা কোন পেকে যাই। এই গরোমোত সংসার চলা কষ্ট হয়া পড়িছে।’
বৃহস্পতিবার নীলফামারী জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রোদের প্রখরতায় শহরে ছিল না তেমন মানুষজন। চলাচল করতে কম দেখা গেছে বিভিন্ন যানবাহন। গরমে একটু জিরিয়ে নিতে কেউবা গাছের তল, কেউবা ভবনের নিচে আবার কাউকে আখের রস খেতে দেখা গেছে।
গরমের কারণে আমন মৌসুমের চারা রোপণও ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকরা আকাশের বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন আমন চারা রোপণে।
জেলা সদরের রেলস্টেশন এলাকার কৃষক আইনুল ইসলাম জানান, বর্ষার ভরা মৌসুম এখন। অথচ বৃষ্টি নাই। রোদে পুড়ে যাচ্ছে জমি। মানুষ বিপদে। বৃষ্টি না থাকায় আমন চারা লাগাতে পারছি না। তবে বৃষ্টি দেরিতে হলে বিকল্প ব্যবস্থায় চারা লাগানো শুরু করতে হবে।
এদিকে তীব্র গরমে বেড়েছে সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জেলা সদরের চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের উত্তর চওড়া পাটোয়ারীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সেরেকুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন ধরে আমার দুই সন্তানের জ্বর, সর্দি ও কাশি। কয়েকদিন ধরে গরমের কারণে এমনটা হয়েছে। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়ার ফলে সুস্থ হচ্ছে এখন তারা।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল আউয়াল জানান, গরমের কারণে সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। আগে যেখানে ৫০ জন রোগী আসত, এখন একশ জন আসছে।
অযথা বাইরে ঘোরাফেরা না করা, বেশি বেশি পানি খাওয়া এবং ভাইরাসজনিত জ্বরে যেসব ওষুধ সেবন করা হয়, সেগুলো সেবনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গেল এক সপ্তাহ ধরে তাপদাহ চলছে নীলফামারী জেলায়। কখনো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি আবার কখনো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অবস্থান করেছে তাপমাত্রা। তবে আজ বৃহস্পতিবার ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বিমল চন্দ্র রায় জানান, আগামী শনিবার পর্যন্ত এরকম আবহাওয়া বিরাজ করবে। এখন যে তাপমাত্রা রয়েছে সেটি মাঝারি তাপদাহ বলে। তবে আগামী রোববার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আজ রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এই সময়ে স্বাভাবিকভাবে যেভাবে চারা রোপণ হওয়ার কথা, তাপদাহের কারণে তেমন হচ্ছে না। ব্যাহত হচ্ছে বলা যায়। আরও একমাস সময় হাতে রয়েছে চারা রোপণে। ততদিনে বৃষ্টি নামারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আকাশের বৃষ্টির দিকে অপেক্ষা না করে কৃষকদের সেচযন্ত্র ব্যবহার করে চারা রোপণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।