রোহিঙ্গা ইস্যুকে সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে : মির্জা ফখরুল
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের চরম ব্যর্থতা দেশের জন্য মহাসংকট সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত শুরু থেকেই এ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
গুলশানে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে বিএনপি। এসময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করে চলেছে।’ একটি দৈনিক পত্রিকার তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু যুক্ত হলে গত ৪ বছরে রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং এ সংখ্যা দিন-দিন বাড়তেই থাকবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা একদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং সামাজিকভাবে জীবন-জীবিকায় চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে।’
ফখরুল বলেন, ‘১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগণের আবাসন ও খাদ্যের যোগান দেওয়া, স্যানিটারি ব্যবস্থাসহ পরিচ্ছন্নতা বিধান, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান, ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গা সন্তানদের শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা ব্যবস্থা, বিনোদন, জীবনাচার ইত্যকার বিষয় অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নির্ভর এক মহাকর্মযজ্ঞ। বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী সংকটকালে ইতোমধ্যে ১৭ কোটি মানুষের ভারে ভারক্রান্ত বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের এ অতিরিক্ত বোঝা বহন করা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বন্ধু রাষ্ট্রদের এবিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের জাতি হিসেবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য রাখাইনে মুসলিম জনপদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা যখন কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়, তখন মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির পরিবর্তে সেদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সফর করে এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এক ধরনের সহমর্মিতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সাহায্য প্রদানের আশ্বাস প্রদান করে। এদিকে, চীন সরকার একদিকে বরাবরের মতো মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের ঘোষণা অব্যাহত রাখে, অন্যদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরাণিত করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু, বাস্তবিক পক্ষে অদ্যাবধি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ত্রিপক্ষীয় পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ও বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে আলাদাভাবে দেখলে চলবে না। একটি অগণতান্ত্রিক ও গণবিচ্ছিন্ন সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিক পরিণতিই হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও স্থবিরতার প্রধান কারণ। এই মুহূর্তে সর্বাগ্রে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকেই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।’