নেতিবাচকতা নয়, বন্ধুত্বই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের শক্তি : মঞ্জু
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাবের কোনো স্থান নেই। উন্নয়নের জন্য, মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক মনোভাবের বিকল্প নেই। সেখানে নেতিবাচকতার কোনো স্থান নেই। বিভক্তি নয় বন্ধুত্বই দুই দেশের সম্পর্কের শক্তি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্ততায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ভারতের জনগণ যেভাবে হাতজোড় করে মানুষকে সম্ভাষণ জানায়-এটা তাদের মহানুভবতার পরিচয়। বিদেশি যাঁরা ভারতে যান, তাঁদের এই বিনম্র আচরণ বিমোহিত করে।
মন্ত্রী বলেন, ভারত বিশ্বের শক্তিধর দেশের একটি। এমন বড় দেশ পাশে থাকলে অন্য দেশগুলোর মধ্যে হীনমন্যতার সৃষ্টি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকা মেক্সিকো ও কানাডার মাঝে আমরা এটা দেখতে পাই। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে সেই নেতিবাচক আচরণকে গুরুত্ব দেওয়ার সময় নেই। মানুষে-মানুষে দেশে-দেশে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক খেলা থাকবেই কিন্তু আমাদের নিজেদের ভালোটা বুঝতে হবে। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। আমার প্রত্যাশা তরুণ প্রজন্ম সেই নেতিবাচকতা থেকে বেরিয়ে এসে দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় স্থাপন করবে।
ভারত সরকার বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরো জোরালো করতে সাত বছর আগে ২০১০ সালের ১১ মার্চ প্রতিষ্ঠা করে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উঠে আসে অতিথিদের আলোচনায়, শিল্পীদের পরিবেশনায়। সেই সঙ্গে সংস্কৃতির আশ্রয়ে দুই দেশের মানুষ মানুষে সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেওয়ার প্রত্যয় জানানো হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক জয়শ্রী কুণ্ডু। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অতিথিরা।
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু। তাঁর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে কাজ করছে ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার। শুধু ভারতের শিল্পী নয় বরং বাংলাদেশের শিল্পীদের অনুষ্ঠানের আয়োজন বেশি করা হয়ে থাকে এই কেন্দ্রে। গত কয়েক বছর ধরে সেই লক্ষ্যে দুই দেশ এক জোট হয়ে বেশ কিছু উৎসব পালন করেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেছে। এসব উপলক্ষ মানুষের মাঝে সম্প্রীতি বাড়িয়েছে সন্দেহ নেই। তিনি জানান, এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, যোগব্যায়াম প্রভৃতি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী এখানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের শিল্পীরা ভারতেও নানা আয়োজনে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে।
পরে গান দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। মঞ্চে আসেন আইজিসিসির সঙ্গীতগুরু সন্তোষ কুমার মিশ্র এবং তাঁর ২২ সঙ্গীত শিক্ষার্থী। সঙ্গীতের স্বরের খেলায় সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় স্বরশ্রুতি। গান শেষে নাচ নিয়ে আসে আইজিসিসির শিক্ষার্থী শিল্পীরা। নাচ-গানের মেলবন্ধনের পর ছিল কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। হিন্দি ভাষার কবিতা থেকে পাঠ করেন খালেদ হাসান মুন। এরপর শাস্ত্রীয় নৃত্যের পরিবেশনায় শ্রোতা-দর্শকের নয়নে প্রশান্তি ছড়িয়ে দেন আইজিসিসির ৬ থেকে ১২ বছরে শিক্ষার্থীদের দলটি। পরিবেশিত হয় বাল্যকৃষ্ণ নর্তন। অনূর্ধ্ব ১২ বছরের শিল্পীরা পরিবেশন করে গোপ রস শিরোনামের নাচ। নাচ-গান ও কবিতার এই পরিবেশনার মাঝে ছিল যোগব্যায়ামের প্রদর্শনী।
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি- জাতীয় সঙ্গীতের সুরে শেষ হয় সাস্কৃতিক পরিবেশনা। সব শেষে আইজিসিসির সঙ্গীত ও নৃত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সনদপত্র ও স্মারক দেন অতিথিরা।