ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে রিজভী এই মন্তব্য করেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী বারবার নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। গতকালও (শুক্রবার) তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী আবার সরকার গঠনের সুযোগ চাইলেন। এ সময় তিনি আবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। এভাবে সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে ভোট চাওয়া নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোটে দেবে না মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয়নি। পরবর্তী স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে পেশিশক্তি ব্যবহার ও অস্ত্রবাজির মাধ্যমে ব্যালট ছিনতাই করেছে। অসংখ্য লাশের পাহাড় ডিঙিয়ে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে তারা তাদের প্রার্থীদের জোরপূর্বক বিজয়ী ঘোষণা করেছে।’
‘ওই নির্বাচনগুলোতে ভোটাররা ভোট দিতে গেলে তাদের কোথাও লাশ বা কোথাও রক্তাক্ত করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অতীতে যেভাবে ভোটারদেরকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাতে এখন প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টতই বুঝতে পারছেন যে, জনগণ আর তাঁদের ভোট দেবে না। তাই তিনি ভোটের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।’
আওয়ামী লীগ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগের যে ব্যাপক ভরাডুবি হবে, সেটি আঁচ করতে পেরেই তাঁরা এখনই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আর যদি জোর করে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ হয়, তাহলে এই সরকারের হাতে আর কত মানুষ যে গুম, খুন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে, কত বাবা-মা সন্তানহারা হবে, কত স্ত্রী স্বামীহারা হয়ে বিধবার পোশাক পরবে, কত সন্তান পিতৃহারা হবে তার পরিসংখ্যান আন্দাজ করা কঠিন। কারণ তারা তো ক্ষমতায় টিকেই আছে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের নির্যাতনের মধ্য দিয়ে।’
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় জুলুম’
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে যে জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে সেটি প্রধানমন্ত্রী অনুধাবণ করতে শুরু করেছেন। অবাধ-সুষ্ঠু ও সবার নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে নৌকার পাটাতন যে ফুটো হয়ে যাবে, সে ভয়ে তাঁরা এখন ঘুমহারা। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না, জনগণ দুঃশাসনের জবাব দিতে উন্মুখ হয়ে আছে।’
“আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষেই একটি ‘আউট ল’ সংগঠন। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দের কথা শুনলেই মনে হয়, এরা পাহাড়ি গুহায় বসবাসকারী দস্যু দলের সদস্য। দেশের খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে তাঁর ৪০ বছরের বাস করা বাড়ি থেকে নানা কারসাজি করে আদালতের কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়াই পুলিশি শক্তি ব্যবহার করে উৎখাত করেছে। এর পরও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা মওদুদকে খাট পাঠিয়ে দেবেন বলে অমানবিক উপহাস করছেন।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অতীতে দেখা গেছে, যারা এ ধরনের উপহাস করে তাদের পরিণতি হয়েছে করুণ ও অসহায়ের মতো। তাদের করুণ পরিণতিতে জনগণ হাফ ছেড়ে বাঁচে এবং এই তাচ্ছিল্য ও উপহাস তাদের দিকেই ফিরে যায়। কারণ তারা ক্ষমতার মোহে আত্মবিমোহিত হয়ে থাকে। মনে হয় তারা আজীবন মখমলের গদিতে উপবেশন করেই থাকবেন। সামনে এমনও দিন আসতে পারে যেদিন ছেঁড়া মাদুরও তাদেরকে দেওয়ার কোনো লোক থাকবে না।’
‘সত্যকে বদলে দিতে আওয়ামী লীগ অপ্রতিদ্বন্দ্বী’
রিজভী বলেন, “২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিনবদলের পালা’। আসলে আওয়ামী লীগ ‘সত্যবদলের পালা’র একটি সংগঠন। আওয়ামী নেতারা সত্যকে দিনে-দুপুরে বদলে দিতে বা উল্টে দিতে তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। মিথ্যার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ অক্লান্ত, অবিশ্রান্ত।”
“ঈদের প্রাক্কালে ঘরমুখো মানুষ যে চরম দুর্ভোগে পড়েছে তা বর্ণনাতীত। যদিও যোগাযোগমন্ত্রী স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ভালোই লাগছে, কোথাও কোনো যানজট নেই, দৌড়াদৌড়ি করে মানুষের ভোগান্তি লাঘব করতে পেরেছি।’ এই সব কথা বলে যোগাযোগমন্ত্রী কি ভুক্তভোগী মানুষদেরকে উপহাস করলেন, নাকি নিজের মন্ত্রিত্ব রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে সাজিয়ে গুছিয়ে অবলীলায় মিথ্যা কথাগুলোর অবতারণা করলেন?”
‘দোষ চাপানো হচ্ছে বিএনপির ওপর’
রিজভী বলেন, ‘নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় গতকাল রাত সাড়ে ১১টার সময় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দ্বলে তাদের এক নেতা গুরুতর আহত হয়। এই ঘটনাটি বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা স্থানীয় এমপি ছবি বিশ্বাসের ভাতিজা যুবলীগ নেতা পলাশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে কলমাকান্দা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম কেরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে মধ্যরাতে হামলা চালিয়েছে। তাঁর অফিসের সাটার গেট ভেঙে দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ও অফিসের আসবাবপত্র ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়।’