বিএনপি আর ক্ষমতায় আসুক সেটি চাই না : প্রধানমন্ত্রী
আগামী পাঁচ বছর জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানানোয় বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা মানুষ হত্যাকারী, এতিমের টাকা চুরি করা বিএনপি আর ক্ষমতায় আসুক সেটি চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর বদু কাকাকে সাথে নিয়ে ভোটের নামে প্রহসন করেছিলেন। তিনি কি জিয়ার আমলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ৭৯ সালের নির্বাচনের কথা ভুলে গেছেন? অবশ্য তাঁকেও বেশি দিন রাখেননি খালেদা জিয়া। বিদায় নিতে হয়েছে। এখন সব ভুলে গিয়ে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছেন। আসলে একটা কথা আছে না, ‘ওরে মেরেছে কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দিব না।’
আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষ হয় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে। গত ২৫ মে ও ২৬ মে-এর ভারত সফর নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে বিকল্পধারা বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দলটির সভাপতি বি. চৌধুরী বলেন, আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে সংঘাত করে। আর এর ফল ভোগ করে দেশের জনগণ। এই জাতীয় সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এমন লোক দেশের নেতৃত্বে থাকবে যারা দেশের জন্য, জনগণের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করবে।
সরকারের উদ্দেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি আরো বলেছিলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আপনি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করবেন, অথবা খুলনা মার্কা নির্বাচন করবেন সেটি হবে না। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও আগামী পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় সরকার গঠন করা হোক বি. চৌধুরীর এমন প্রস্তাবের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী মনে করছেন?
আজকালের খবরের সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বদু কাকা কি ভুলে গেছেন, জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন তিনি তাঁর সাথে থেকে কী নির্বাচন করেছিলেন? সে নির্বাচন ব্যবস্থা কী রকম ছিল? তখন তো তিনি বিএনপির ভোটচুরির সঙ্গী ছিলেন। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে। ভোট চোরদের কাছ থেকে শিখতে হবে না কীভাবে নির্বাচন হবে। কারণ নির্বাচনের আধুনিকায়ন করেছে আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার।‘
বি. চৌধুরী কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জানানোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভালো কথা, বি. চৌধুরী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছেন। কিন্তু কার কাছে মুক্তি চান? আমার কাছে মুক্তি চেয়ে লাভ কী? আমি কি তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছি? এতিমের টাকা চুরির দায়ে আদালত তাঁকে সাজা দিয়েছেন, সেখানে যান। আমার কাছে মুক্তি চেয়ে লাভ নেই।
ছোট ছোট দলগুলোর যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিন্দু বিন্দু পানি থেকে সিন্ধুর সৃষ্টি হয়। তারা চেষ্টা করুক, যদি দেশের মানুষ তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে ভালো কথা। তবে আমরা মানুষ হত্যাকারী, এতিমের টাকা চুরি করা বিএনপি আর ক্ষমতায় আসুক সেটি চাই না। তবে এটিও মনে রাখবেন জিরো জিরো সমান কিন্তু জিরো-ই হয় সেটি ভুলে গেলে চলবে না।
বিএনপির চেয়ারপারসনের কারাবাসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা চুরির দায়ে আদালত খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এখানে আমার কিছু করার নেই। কই ১০ বছর মামলার কাজ চলেছে, বিএনপির আইজীবীরা তো প্রমাণ করতে পারেননি তিনি (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা মেরে খাননি, এ টাকা এতিমদের জন্য ব্যবহার করেছেন। অন্যায় করেছেন, এখন জেলে গেছেন। আমার তো সাজা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ কী? রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাক, রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে তখন তাঁকে দোষ দিতে পারবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করল, তারা নির্বাচনে এলো কি না এলো এ নিয়ে এত হৈ চৈ কেন? যারা আন্দোলনের নামে দেশের মানুষ খুন করবে তারা নির্বাচনে এলো কি এলো না সেটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, এরা ৭৫ সালের ঘটনা থেকে শুরু করে সব কিছুতে জড়িত তারা নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটি নিয়ে ভাবনার বা জবাব দেওয়ার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু কাউকে ভোটে আনার দায়িত্ব সরকারের নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় যতটুকু উন্নয়ন ও আধুনিকতা এসেছে সেটি আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। তাই যারা ভোট ডাকাতি, ভোট চুরির সাথে জড়িত তাদের কাছ থেকে ভোটের বিষয়ে জানতে হবে না। যাদের মাটিতে নিজেদের পা নেই তাদের আন্তর্জাতিক সমর্থন লাগে। আমাদের তো মাটিতে পা রাখার জায়গা আছে। তাই এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন, সরকার শুধু সহযোগিতা করবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দুই দিনের সরকারি সফর শেষে গত ২৬ মে রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গত ২৫ মে সম্মানিত অতিথি হিসেবে তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেন। বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন তাঁরা। ২৬ মে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
দেশে ফেরার আগে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এই সফরে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি’ এবং কলকাতায় ঐতিহাসিক ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু’ জাদুঘর পরিদর্শন করেন।