সিলেটে রায়হান হত্যায় ৫ পুলিশসহ ৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র
সিলেট কোতোয়ালি থানার বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমেদ (৩৩) হত্যা মামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ছয়জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেনসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাত মাস পর আলোচিত এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো।
আজ বুধবার (৫ মে) সকাল ১১টায় এসএমপির আদালত পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাসের কাছে অভিযোগপত্রটি হস্তান্তর করে পিবিআই’র তদন্তকারী দল। নিহত রায়হান আহমদ নগরীর জালালাবাদ থানাধীন নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
অভিযোগপত্র দাখিলের তথ্য নিশ্চিত করে আদালত পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘বহুল আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে পিবিআই। এতে পাঁচ পুলিশসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কথিত সাংবাদিক নোমান পলাতক রয়েছেন।’
চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলার কারণে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হচ্ছে না। আদালতের কার্যক্রম শুরুর পরই তা করা হবে। তবে এর মধ্যে পিবিআই’র দেওয়া অভিযোগপত্রে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। কোনো অসঙ্গতি পেলে সংশোধন করার জন্য তা পিবিআইকে জানানো হবে।
গত ১১ অক্টোবর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রায়হানের মরদেহ পান স্বজনেরা। ওই দিনই তাঁর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে, পিবিআই মামলার তদন্তভার গ্রহণের পর ১৫ অক্টোবর পুনরায় লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করে।
রায়হান হত্যার মূল হোতা বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গত ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।
আকবর হোসেন ভুঁইয়াকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এঁরা হলেন সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র ও রায়হান হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল বাতেন। এর আগে একই অভিযোগে বন্দরবাজার ফাঁড়ির এসআই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
রায়হান উদ্দিন আহমদকে (৩৩) গত ১০ অক্টোবর রাতে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। পরের দিন ১১ অক্টোবর সকালে তাঁর লাশ পায় পরিবার। পরে ওই দিন রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। স্বজনদের অভিযোগ, ১০ হাজার টাকা না পেয়ে রায়হানকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর ১২ অক্টোবর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এসআই টিটু চন্দ্র দাস, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ ও তৌহিদ মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যাহার করা হয় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে। এর মধ্যে এসআই আকবর, এএসআই আশেক এলাহি, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদকে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এ ছাড়া নিহত রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা শেখ সাইদুর রহমানকেও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।