বোলারদের নৈপুণ্যে জিতল বাংলাদেশ
বড় জয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ম্যাচ রাঙিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছয় উইকেটে হারিয়েছে তামিম-সাকিবরা। এই জয়ের সুবাদে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল লাল-সবুজের দল।
আজ বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৩২.২ ওভারে ১২২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ৩৩.৫ ওভারে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজকীয়ভাবে ফিরলেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। বল হাতে ৭.২ ওভার বোল করে মাত্র আট রান দিয়ে চার উইকেট নিয়েছেন সাকিব। ব্যাট হাতে করেছেন ১৯ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ১২২ রানের জবাবে শুরুটা বেশ সাবধানে করে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের শুরুর উইকেটে তোলে ৪৭ রান। ১৩.২ ওভারে সাজঘরে ফেনে লিটন। আকিল হোসেনের মিডল স্টাম্পে করা বল ঠিকঠাকভাবে খেলতে পারেননি লিটন। বল চলে যায় অফস্টাম্পে, বোল্ড হয়ে ফেরেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৩৮ বলে দুই বাউন্ডারিতে ১৪ রান করেন তিনি।
অনেক আলোচনার পর ওয়ানডাউনেই দেখা গেল নাজমুল হোসেন শান্তকে। কিন্তু প্রত্যাশার চাপ নিতে পারেননি তরুণ এই ব্যাটসম্যান। আকিলের করা অফ স্টাম্পের বাইরে বল মোকাবিলা করতে গিয়ে আউট হন তিনি।
চারে নেমে তামিমকে সঙ্গ দেন সাকিব। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি এই জুটি। তামিমকে ফিরিয়ে ২৬ রানের জুটি ভাঙেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মেদ। ক্যারিবীয় অফ স্পিনারের বল উইকেটের বাইরে এসে খেলতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু ব্যাটে-বলে টাইমিং ঠিক হয়নি। বল চলে যায় ক্যারিবীয় উইকেটকিপারের হাতে, বেলস ফেলে তামিমকে সাজঘরের পথ দেখা তিনি।
বোলিংয়ে দারুণ করা সাকিব ব্যাট হাতে রানের আক্ষেপ মেটাতে পারেননি। রানের খরায় থাকা সাকিব ১৯ করে আকিলের বলেই বোল্ড হন। বাকিটা পথ এগিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানে ৩৩.৫ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। এলবির ফাঁদে ফেলে সাজঘরে পাঠিয়েছেন সুনিল আমব্রিসকে। সাত রান করে ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার।
এরপর বৃষ্টি নামলে এক ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টির পর ম্যাচ গড়ালে ফের বল হাতে সাফল্য পান মুস্তাফিজ। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজের করা বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন ডি সিলভা। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় বাইরের দিকে। গালিতে ছিলেন লিটন। দারুণ ক্যাচ নিয়ে সিলভাকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ১৩ বলে নয় রান করেন সিলভা।
এরপর উইকেটের দেখা পান সাকিব আল হাসান। আন্দ্রে ম্যাকার্থিকে আউট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার উপলক্ষ উদযাপন করেন দেশসেরা অলরাউন্ডার।
১৭তম ওভারে ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন মোহাম্মেদকে ফাঁদে ফেলেন সাকিব। তাঁর করা ওভারের শেষ বল উইকেট থেকে বেরিয়ে ঠেকাতে চেয়েছিলেন জেসন। কিন্তু টাইমিং ঠিক হয়নি। বল চলে যায় মুশফিকুর রহিমের হাতে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্টাম্প করেন মুশফিক। আড়াই বছর পর ওয়ানডেতে ফেরার ম্যাচে ৩৬ বলে ১৭ রান করেন জেসন মোহাম্মেদ।
ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নামা বোনেরকেও টিকতে দেননি সাকিব। অভিষিক্ত বোনেরকে অফ স্টাম্পের বাইরের বল দিয়ে এলবির ফাঁদে ফেলে তৃতীয় শিকার তুলে নেন সাকিব।
মুস্তাফিজ-সাকিবের পর ৩০তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কাঁপিয়ে দেন হাসান মাহমুদ। তুলে নেন জোড়া উইকেট। ৩০তম ওভারের প্রথম বলে ফিরিয়ে দেন উইকেটে থিতু হওয়া রভম্যান পাওয়ালকে। ২৮ রান করেন তিনি। এরপর আউট করেন রেমন রিফারকে। ৪০ রান করা কাইল মায়ার্সকে ফেরান মিরাজ। শেষ দিকে হাসান মাহমুদ ও সাকিবের শিকারে ১২২ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে চার উইকেট নিয়েছেন সাকিব। তিনটি নিয়েছেন হাসান। মুস্তাফিজ নিয়েছেন দুটি, আর মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার একটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩২.২ ওভারে ১২২/১০ (জেসন মোহাম্মেদ ১৭, সুনিল আমব্রিস ৭, জশুয়া ডি সিলভা ৯, আন্দ্রে ম্যাকার্থি ১২, এনক্রুমা বোনের ০, রভম্যান পাওয়েল ২৮, কাইল মায়ার্স ৪০, শেমার হোল্ডার ০, আলজারি জোসেফ ৪, রেমন রিফার ০, অ্যাকিল ১; সাকিব ৭.২-২-৮-৪, মুস্তাফিজ ৪-০-২০-২, রুবেল ৬-০-৩৪-০, হাসান ৪-১-২৮-৩, মেহেদী ৭-১-২৯-১)।
বাংলাদেশ : ৩৩.৫ ওভারে ১২৫/৪ (তামিম ৪৪, লিটন ১৪, শান্ত ১, সাকিব ১৯, মুশফিক ১৯*, মাহমুদউল্লাহ ৯*; আকিল ১০-১-২৬-৩, আলজারি ৮-৩-১৭-০, মোহাম্মেদ ৮-০-১৯-১, হোল্ডার ৩-০-২৬-০, ম্যাকার্থি ২-০-১০-০, শেমার ৩-০-২৬-০)।
ফল : ছয় উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সাকিব আল হাসান।