ভঙ্গুর ব্যাটিং, কোনো অনুপ্রেরণা কাজ হচ্ছে না বাংলাদেশের
সাকিব আল হাসানকে খুবই অসহায় মনে হচ্ছিল তখন। কাইল মায়ার্স বাংলাদেশের মিডল অর্ডারে ধাক্কা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই নতুন অধিনায়ক পিচে আসেন। তিনি একটি বলও মোকাবিলা করেননি তখন, যখন তার দল ম্যাচের এক ঘণ্টার মধ্যে ৪৫ রান তুলতেই ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলে, ব্যাটিংয়ে বেহাল দশা হয়ে পড়ে।
২০১৮ সালে এই অ্যান্টিগায় লজ্জার ব্যাটিং উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালেও একই অবস্থা। প্রথম ঘণ্টার মধ্যই সব কিছু ওলট-পালট হয়ে পড়ে।
এই ব্যর্থতা ঠেকাতে সাকিব বাকি দেড় ঘণ্টায় অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি পারেননি। প্রথম দিনের টেস্ট ব্যাটিংয়ে কোনো পরিকল্পনার ছাপ ছিল না। সাকিবের ৬৭ বলে ৫১ রান দলকে তিন অঙ্কে পৌঁছে দিয়েছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণ চোখে পড়ার মতো ছিল। কেমার রোচ ও জেডেন সিলেস দলকে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছেন। মায়ার্স ও আলজারি জোসেফ আঁটসাঁট বোলিং উপহার দেন। তাই বাংলাদেশ ১০৩ রানে গুটিয়ে যায়।
সিলস, জোসেফ, মায়ার্স এবং এনক্রুমাহ বোনার— যারা স্লিপে দুটি ক্যাচ নিয়েছেন। মুলতান থেকে কদিন আগেই অ্যান্টিগায় পৌঁছেন ক্যারিবীয় খেলোয়াড়রা। তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি ওডিআই সিরিজ খেলেছিল।
সেটা কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। উপরন্তু আত্মসমর্পণ করেছে। হোম সিরিজে পরাজয়ের সেই স্মৃতি এখনো তাজা। ঘরের মাঠে ব্যাটাররা প্রথম ইনিংসে ছয়টি শূন্য রান করেছিল, অ্যান্টিগাতেও প্রথম দিনে ঠিক তেমন অর্জন।
সপ্তম টেস্টে পঞ্চমবারের মতো কোনো রান না করেই আউট হওয়া তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় যেন ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি নিউজিল্যান্ডে ৭৮ এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতে ১৩৭ রান করেছেন। কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরে সব বলে খোঁচা দেওয়া তাঁর অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। তিন নম্বরে নাজমুল হোসেন শান্তর 'প্রতিভাবান' ট্যাগটি এখন হারাতে বসছেন। তাঁকে বাংলাদেশের ভবিষ্যত তারকা মনে করা হচ্ছিল। শেষ ১৭ টেস্ট ইনিংসে মাত্র একটিতে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক আবারও ব্যর্থ। তিনি একটি খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। যা প্রত্যেক খেলোয়াড়রেই হয়ে থাকে। কিন্তু পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করা কারও পক্ষে ভালো নয়। যিনি মাত্র এক বছর আগে টেস্ট ক্রিকেটে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন।
অ্যান্টিগায় ১৪তম ওভারে তামিম ইকবাল, মাহমুদুল, শান্ত ও মুমিনুলরা চলে যান। মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলী ছাড়া দলের মিডেল আর্ডার ছিল কিছুটা দুর্বল। ফর্মে থাকা লিটন দাস ও নুরুল হাসান সোহানও পারেননি নিজেদের মেলে ধরতে।
লিটন ধৈর্যের কোনো কিছুই দেখাতে পারেননি। অথচ এই বছর দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। সোহান যার ঘরোয়া আসরে ফারফর্ম করে দলে ফেরেন। তিনি চরম ব্যর্থ হয়েছেন। বল ছাড়ার সময় এলবিডব্লিউ হন।
এসব কিছু সাকিবের চোখের সামনে হয়েছে। এক ওভারে অর্ধেক বল স্লগ করার চেষ্টা করা, অন্য তিনটিতে স্ট্রাইক করে তিনি সেট হন। সেট হয়ে গেলে তিনি ফিল্ডার দেখে ফাঁক বাছাই করে খেলেন। তিনি হাফসেঞ্চুরি করেছেন, ঠিক দলের বিপর্যয় ঠেকাতে পারেননি।
বাংলাদেশের টেল-এন্ডাররা কখনোই ভালো কিছু করে দেখাতে পারেন না। মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হওয়ার পর তাইজুল ইসলামও পারেননি কিছুটা দৃঢ়তা দেখাতে। রাসেল ডোমিঙ্গো, জেমি সিডন্স ও খালেদ মাহমুদের চেষ্টা খুব একটা কাজে আসছে না।
অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য কোনো অনুপ্রেরণা কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। বাংলাদেশের ব্যাটারদের ভুল ছিল চোখে পড়ার মতো।