সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে ২১৭ রানেই শেষ অস্ট্রেলিয়া
যেন এগার বছর আগের চিত্রটাই ফিরিয়ে আনল বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে সফরে প্রথম টেস্টেও লিড নিয়েছিল টাইগাররা। শাহরিয়ার নাফীসের শতকে সেবার প্রথম ইনিংসে ৪২৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৯ রানে অলআউট হয়েছিল সফরকারীরা। এক যুগ পরেও অবস্থাটা একই থাকল। এবারও সিরিজের প্রথম টেস্টে লিড নিলো মুশফিকুর রহিমের দল। বাংলাদেশের ২৬০ রানের জবাবে ২১৭ রানে অলআউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অসিদের চেয়ে ৪৩ রানে এগিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করবে বাংলাদেশ।
সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে ১৪৪ রানেই আট উইকেট হারিয়ে বসেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্বীকৃত সব ব্যাটসম্যানই ফিরে গেছেন সাজঘরে। তবে শেষপর্যায়ে এসেও নিজেদের লড়াকু মনোভাবের পরিচয়টা ভালোমতোই দেয় অসিরা। নবম উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়ে ব্যবধান যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন প্যাট কামিন্স ও অ্যাশটন অ্যাগার। তবে শেষ রক্ষাটা করা সম্ভব হয়নি। চা বিরতির পর প্রথম ওভারেই প্যাট কামিন্সকে ফিরিয়ে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এরপর অ্যাশটন অ্যাগারকেও ফিরিয়ে দেন সাকিব। এর আগে টেস্টে কামিন্সের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ছিল ২১ রানের। আজ মিরপুর টেস্টে সেটা ছাড়িয়ে গেছেন তিনি।
বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য কত প্রস্তুতিই না নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ অনুশীলন, রণকৌশল নির্ধারণ—কোনো কিছুই বাদ যায়নি। তারপরও সাকিব-মিরাজদের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছেন স্মিথ-ওয়ার্নাররা। গতকাল মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের শেষভাগে তিন উইকেট হারানোর পর আজ দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই চাপের মুখে পড়ে সফরকারীরা। দিনের তৃতীয় ওভারেই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এরপর ম্যাট রেনশ ও পিটার হ্যান্ডসকম্বে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিল সফরকারী দলটি। পঞ্চম উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়েছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। তবে খুব বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই এই জুটি ভেঙেছেন তাইজুল ইসলাম। ৩৩ রান করে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েছেন হ্যান্ডসকম্ব। ৪৫ রান করে সাকিবের শিকার হয়েছেন রেনশ। তাইজুল ইসলামের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচটা ধরতে পারেননি সৌম্য সরকার। জীবন পেয়েছিলেন ম্যাট রেনশ। তবে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটসম্যান। সাকিব আল হাসানের পরের ওভারে সেই সৌম্যর হাতে ক্যাচ দিয়েই সাজঘরে ফিরতে হয়েছে রেনশকে।
এরপর সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে একের পর এক অসি ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত স্কোরে মাত্র ২১৭ রানই তুলতে সক্ষম হয় বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দলটি।
এর আগে প্রথম দিনের খেলায় মিরাজের শিকার হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। বাঁহাতি এই ওপেনারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেছিলেন মিরাজ। এবার অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্মিথের উইকেটটিও ঝুলিতে পুরেছেন এই তরুণ অফস্পিনার। স্মিথ সাজঘরে ফিরেছেন বোল্ড হয়ে। দুজনের ব্যাট থেকেই এসেছে ৮ রান। প্রথম দিনে সাজঘরমুখী হয়েছিলেন নাথান লায়ন ও উসমান খাজাও। ফলে তিন উইকেটে ১৮ রান করে প্রথম দিনটা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে প্রথম দিনের খেলায় নিজেদের ৫০তম টেস্ট খেলতে নেমে একসঙ্গে জ্বলে উঠেছিলেন বাংলাদেশের দুই তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। তামিমের ৭১ ও সাকিবের ৮৪ রানের লড়াকু ইনিংস দুটিতে ভর করে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছিল ২৬০ রান।