তারপরও দিনটি বাংলাদেশের
এখান থেকে সকিছুই হতে পারে। অস্ট্রেলিয়া দল আর বিশ-ত্রিশ রান যোগ করলে লিডটা প্রায় ১০০ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ইনিংসে এই উইকেটে ১০০ রান শোধ করে বড় লিডের আশা করলে সেটাকে বেশ দুঃসাহসিকই বলতে হবে। আবার কাল সকালে পাঁচ-দশ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে ফেলে মোটামুটি একটা লক্ষ্য দাঁড় করাতে পারলে জয়টাকে অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তৃতীয় দিন দুটি সেশনে ১৫২ রান যোগ করেছে অস্ট্রেলিয়া। তারপরও দিনটাকে বাংলাদেশের বলার কারণ হলো-অস্ট্রেলিয়ার রানটাকে খুব বেশি বাড়তে দেয়নি টাইগার বোলাররা। ২ উইকেটে ২২৫ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা অসিরা আজ উইকেটে থিতু হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত রান ৯ উইকেটে ৩৭৭ রান করা অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ৭২ রানে।
এক ডেভিড ওয়ার্নার ছাড়া আজ বাকিদের হাত খোলার সুযোগ দেননি মুস্তাফিজ-মিরাজরা। দুটি সেশনে প্রতিপক্ষের সাতটি উইকেট তুলে নিয়েছে টাইগার বোলাররা। উইকেট সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারত। মিরাজ ও সৌম্য সহজ দুটি ক্যাচ না ছাড়লে আজই ব্যাটিং শুরু করতে পারত বাংলাদেশ।
বৃষ্টির কারণে তৃতীয় দিনের পুরো একটা সেশন নষ্ট হয়েছে। এতে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের লাভটাই বেশি হয়েছে। তিন ঘণ্টা বৃষ্টি শেষে দুপুর দেড়টার দিক আবার খেলা শুরু হয়।
আজ দিনের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। দলীয় ২৫০ রানে সাকিব আল হাসানের এক দারুণ থ্রোয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৮২ রান করেন হ্যান্ডসকম্ব। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ফেরার পর সেঞ্চুরি করেন ডেভিড ওয়ার্নার। এশিয়ার মাঠে ওয়ার্নারের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। এবারের বাংলাদেশ সফরে এটি তাঁর দ্বিতীয় শতক।
শতকের পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত ১২৩ রানে মুস্তাফিজের বলে ইমরুলের তালুবন্দি হন তিনি। প্রথম দুটি প্রচেষ্টায় বলটি ধরতে পারেননি ইমরুল। তৃতীয় দফায় অবশ্য আর ভুল করেননি তিনি। ২৩৪ বল মোকাবিলা করে সাতটি চারে ১২৩ রান করেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার ফেরার পর দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করছিলেন হিলটন কার্টরাইট। তবে তাঁকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৮ বলে দুটি চার ও এক ছয়ে ১৮ রান করেন এই অসি অলরাউন্ডার।
এরপর অসি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ম্যাথু ওয়েডকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টারের বলটা লেগেছিল ওয়েডের প্যাডে। টাইগার ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ চেয়ে বসেন ওয়েড। শেষ রক্ষা হয়নি। রিপ্লেতে দেখা যায় পিচে পড়ে বলটা মিডল স্টাম্পে আঘাত করত।
পরের ওভারে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। উইকেটে পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন অধিনায়ক মুশফিক। ৩৮ রান করেন ম্যাক্সওয়েল। এরপর প্যাট-কামিন্সকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার আভাস দিচ্ছেলেন মিরাজ। তবে শেষ বিকেলে অ্যাশটন অ্যাগার বেশ ভোগাচ্ছিলেন। সৌম্য সরকার অ্যাগারের ক্যাচ ফেলে দিলেও সেটা বেশি ভোগায়নি বাংলাদেশ। সাকিবের দারুণ ঘূর্ণিতে স্টাম্প উপড়ে যায় তাঁর।
এরপর প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গতকাল মঙ্গলবার অসি ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার ম্যাট রেনশকে সাজঘরে ফেরান তিনি। এরপর অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে ইনিংস গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৯৩ রান যোগ করেন তাঁরা। জুটিটা ভাঙেন তাইজুল। নিজের প্রথম বলেই স্মিথকে বোল্ড করেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ৯৪ বলে ৫৮ রান করেন অসি অধিনায়ক।
এরপর ১০০ রানের জুটি বেঁধে বাংলাদেশের কাজটা আরো কঠিন করে তোলে ওয়ার্নার-হ্যান্ডসকম্ব জুটি। ওয়ার্নারকে ফেরানোর বেশ কয়েকটি সুযোগ পেলেও সেগুলো কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। শর্ট লেগে মুমিনুল ওয়ার্নারের ক্যাচ ছাড়েন। এরপর ব্যক্তিগত ৭৩ রানে আরেকটি সুযোগ পান মুশফিক। মিরাজের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়েছিলেন ওয়ার্নার। সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করেন অধিনায়ক মুশি।
এর আগে মুশফিকের ৬৮, সাব্বির রহমানের ৬৬ ও নাসির হোসেনের ৪৫ রানে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রান করেছে বাংলাদেশ। অসি বোলারদের মধ্যে নাথান লায়ন একাই নিয়েছেন ৭ উইকেট।