গরুর খামারের কেয়ারটেকারকে কুপিয়ে হত্যা, লন্ডন প্রবাসী মালিক গুরুতর আহত
দুর্বৃত্তরা একটি খামারে ঢুকে খামারের কেয়ারটেকার আহাদ আলী চৌধুরীকে (৪৫) কুপিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা এবং খামারের মালিক লন্ডন প্রবাসী মুরাদ শেখকে (৬২) কুপিয়ে আহত করেছে। আজ রোববার (৯ এপ্রিল) ভোর রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের গরুর খামারের একটি ভবনের ভিতরে এই ঘটনা ঘটেছে।
আহত খামারমালিক মুরাদ হোসেনকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে ইতোমধ্যে পুলিশের সব কটি শাখা তদন্তকাজে নেমে পড়েছে। অপরাধের বিষয়টি উদঘাটনের জন্য ফরিদপুর সিআইডির ক্রাইম সিনের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত কাজ করেছে।
হতাহতের খবর পেয়ে গোপালগঞ্জের বিশেষ পুলিশ সুপার (সিআইডি) মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. মোহাইমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. খায়রুল আলম, গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদসহ একদল পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং অপরাধের বিষয় নিয়ে তদন্ত করেন।
নিহত আহাদ চৌধুরীর বাড়ি জেলার কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি গ্রামে। তাঁর বাবা মৃত বকুল চৌধুরী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী মুরাদ শেখ ও কেয়ারটেকার আহাদ আলী চৌধুরী প্রতিদিনের মতো দুর্গাপুর গ্রামের তাঁর খামারের পাশেই একতলা ভবনের ভিতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোররাত আড়াইটার দিকে ৮ থেকে ৯ জনের একদল দুর্বৃত্ত লন্ডন প্রবাসী শেখ মুরাদ হোসেনের গরুর খামারের পাশে বিল্ডিংয়ে ঢুকে কেয়ারটেকার আহাদ আলী চৌধুরীকে কুপিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ সময় তারা খামার মালিক লন্ডন প্রবাসী মুরাদ শেখকেও কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। পরে দুর্বৃত্তরা আলমারি ভেঙে কিছু নগদ টাকা ও ল্যাপটপ নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে খামারের শ্রমিক সোহেল সহ অন্য সদস্যরা সকালে দরজা খোলা দেখতে পায়। পরে আহত অবস্থায় মুরাদ শেখকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির মালিক কেয়ারটেকারকে নিয়ে খামারের পাশে একটি একতলা ভবনে থাকতেন। মুরাদ হোসেন প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত। গরুর খামার মালিক মুরাদ গত তিন মাস আগে লন্ডন থেকে এসে ওই খামারে অবস্থান করছেন। গরুর খামার ও অসুস্থ মালিককে কেয়ারটেকার আহাদ আলী চৌধুরী দেখাশোনা করতেন।
নিহত আহাদ আলী চৌধুরীর বড় বোন সাহেরা বেগম বলেন, ‘সম্প্রতি আমার ভাইকে কে বা কারা হুমকি দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
ফরিদপুর থেকে আগত সিআইডির ক্রাইম সিনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। অজ্ঞাতনামা এক বা একাধিক ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। হত্যাকারীরা আহাদ আলী চৌধুরীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে এবং পরে গলায় বিদ্যুতের তার, নাল-পোষ ও বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করেছে। হত্যাকারীরা এ সময় খামার মালিক লন্ডন প্রবাসী মুরাদ শেখকে কুপিয়ে আহত করে।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তেমন কোনো আলামত আমরা উদ্ধার করতে পারিনি। কারণ এই হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার আনাগোনায় ক্রাইম সিনের বিভিন্ন আলামত নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে অপরাধের চিহ্ন নির্ণয় করতে সমস্যা হয়েছে। তবে রক্তমাখা মশারি, বালিশ ও সামান্য কিছু আলামত পাওয়া গেছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে অভিযান চলছে বলে জানান।