চুইঝালের হালিম বদলে দিয়েছে খুলনার রাশেদের জীবন
খুলনার চুইঝালের কথা কে না জানে। বৃহত্তর খুলনায় চুইঝাল দিয়ে রান্না গরু বা খাসির মাংস দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। চুকনগরের আব্বাস হোটেল চুইঝালের রান্না করা মাংস বিক্রি করে এমন নাম কুড়িয়েছে যে তার দেখাদেখি জেলার জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় এমনকি ঢাকার কয়েকটি হোটেলেও চুইঝালের রান্না করা মাংস বিক্রি হচ্ছে।
কিন্তু চুইঝাল দিয়ে খাসির হালিম পাওয়া যায় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া গ্রামে। যার একমাত্র কারিগর ঐ গ্রামের সন্তান রাশেদুল (৩৫)। সবাই তাকে রাশেদ নামেই ডাকে। তিনি প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার হালিম বিক্রি করেন। তার দোকানে গেলেই দেখা যাবে লিখা আছে- ‘রাশেদের ঘুগনি অ্যান্ড খাসির নলার হালিম’। প্রতি বাটি হালিমের দাম ৬০ টাকা। তবে, নলার হালিমের দাম ৮০ টাকা।
খুলনাসহ দেশের সর্বত্রই হোটেলগুলোতে হালিম পাওয়া গেলেও রাশেদুলের বানানো হালিমের সঙ্গে অন্য হালিমের পার্থক্য করে খুলনার বিখ্যাত চুইঝাল। অন্যান্য হালিমের মতো রাশেদুলের হালিমে সবধরনের মসলার উপাদান থাকলেও চুইঝাল এই হালিমকে অনন্য করেছে।
রাশেদুল জানান, গ্রামের স্কুলে অল্প-স্বল্প লেখাপড়া করে চাকরির পেছনে না ছুটে বা অপরের কাছে কাজের জন্য না গিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। প্রথমে ছোলা ঘুগনি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। যা পাঁচ বছর আগের কথা। তখন তিনি ছোলা ঘুগনির মধ্যে চুইঝাল দিতেন। ফলে এই খাবারও জনপ্রিয়তা পায় এবং ব্যবসায় লাভ হতে থাকে। এখনও তিনি চুইঝালের ঘুগনি বিক্রি করেন। এই অনুপ্রেরণায় তিনি চুইঝালের তৈরি হালিম শুরু করেন দুই বছর আগে। ইতোমধ্যে এই হালিম খেতে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এমনকি যশোর থেকেও আসেন ভোজন রসিকরা। বিকেল ৪টা থেকে শুরু করে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত এই হালিমের বিক্রি চলে। প্রতিদিন মোটামুটি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ বাটি হালিম বিক্রি হয়।
চুইঝালের হালিম বদলে দিয়েছে খুলনার রাশেদের জীবন
চুইঝালের হালিম বিক্রি করে রাশেদুল এখন সচ্ছল। তার বাবার নাম আলতাফ গাজী। তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। রাশেদুলও শুরুতে সে কাজই করেছেন। প্রথমে ছোলা ঘুগনি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ান এবং চুইঝালের হালিম দিয়ে সফল হওয়া। অল্প দিনের মধ্যে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়ে খুলনাসহ বৃহত্তর খুলনা জেলা ও যশোর জেলায়। তার সঙ্গে কাজ করে আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।
রাশেদুল বিবাহিত এবং তাদের ঘরে এক সন্তান রয়েছে। হালিম বিক্রি করেই তিনি জমি কিনে বাড়ি করেছেন।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, রাশেদুলের দোকানের সামনে চেয়ারগুলোতে বসার জায়গা নেই। আশপাশের জেলাসহ খুলনার নানা জায়গা থেকে এসে আগেই হালিমের অর্ডার দিয়েছেন ক্রেতারা। কেউ খাচ্ছেন, কেউ পার্সেল নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
খুলনার নিরালার প্রান্তিকা থেকে এসেছেন আলহাজ্ব রুস্তম আলী হাওলাদার, শেখ সারোয়ার হোসেন, শেখ শওকত হোসেন, নাসির আকন্দ ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তারা বলেন, ‘এক ঘণ্টা আগে হালিমের জন্য অর্ডার দিয়েছি। পেতে আরও আধা ঘণ্টার মতো লাগবে। আমাদের আগে ৬৫জন সিরিয়ালে আছেন। আগে যারা রাশেদুলের হালিম খেয়েছেন তাদের কাছে শুনে আমরা হালিম খেতে মাইক্রোবাস ভাড়া করে এই হালিম খেতে এসেছি।’
রাশেদে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আামার হালিমকে অন্য হালিম থেকে পার্থক্য করে চুইঝাল ও বিভিন্ন রকম মসলার মিশ্রণ। যেহেতু হালিম খেতে দূরদূরান্ত থেকে হিন্দু, মসুলমান সবাই আসেন তাই শুধু খাসি দিয়ে হালিম তৈরি করি।’