ফিরে দেখা ২০২০ : যাদের হারিয়েছে দেশ
চলতি বছর মহামারি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজনকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিন যোগ হচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। করোনা ছাড়াও জাতি হারিয়েছে তার প্রবীণ ও বিদগ্ধ গুণীজনদের। মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিকদের পাশাপাশি খ্যাতিমান মানুষদের হারিয়েছে দেশ। বিদায়ী বছরে চলে গেছেন প্রতিথযশা শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা। নিভে গেছে আইনের অনেক বাতিঘর।
শিক্ষাবিদ
চলতি বছরে করোনায় দেশ যাদের হারিয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় মারা যান প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ। বিদায়ী বছরে চিরবিদায় নিয়েছেন আরেক বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, খ্যাতনামা প্রকৌশলী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব সা’দাত হুসাইনও।
চিকিৎসক
দেশে করোনা পরিস্থিতি যখন শুরু হয় তখন আতঙ্কে যখন বাসায় বন্দি জীবনযাপন করছে, তখন সামনের যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত চিকিৎসকরাই এগিয়ে এসেছেন। জীবন বাজি রাখতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে অনেক চিকিৎসককে। দেশে সর্বপ্রথম চিকিৎসক হিসেবে করোনায় মারা গেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. মঈন উদ্দিন। এ ছাড়া আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিফ হেমাটোলজিস্ট, দেশের অন্যতম হেমাটোলজিস্ট ও ল্যাবরেটরি মেডিসিন স্পেশালিস্ট অধ্যাপক কর্নেল (অব.) মো. মনিরুজ্জামান, ইবনে সিনার রেডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মেজর (অব.) আবুল মোকারিম মো. মহসিন উদ্দিন করোনায় মারা গেছেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) হিসাবে, গত ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একে একে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২২ জন চিকিৎসক।
আওয়ামী লীগ
করোনার বছরে সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে রাজনীতিবিদদের। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিম ও সাহারা খাতুন এ বছর মারা গেছেন। করোনায় মারা গেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম, সাবেক সাংসদ হাজি মকবুল হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন।
বিএনপি ও ইসলামী দল
বর্ষীয়ান রাজনীতিক এবং বিএনপির সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল, বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি আহমেদ সাজা, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, বিএনপির সাবেক সাংসদ ও পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও আনোয়ারুল কবির তালুকদারও মারা গেছেন এ বছরেই। পাশাপাশি দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং সাবেক সংসদ সদস্যকে হারিয়েছে বিএনপি। বছরের আলোচিত মৃত্যুর মধ্যে আছে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমেদ শফী ও সহ-সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকাল।
আইনের বাতিঘর
এই বছরটি ছিল আইনাঙ্গনের জন্যও অপূরণীয় ক্ষতির। জীবন প্রদীপ নিভে গেছে আইনের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত বর্ষীয়ান আইনজীবী এবং সাবেক অ্যার্টনি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিকুল হক এবং দীর্ঘ ১২ বছর ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল থাকা অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম এবং লালমনিরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) ফেরদৌস আহমেদ। এ ছাড়া আইনাঙ্গনে অনেক সিনিয়র আইনজীবীকে হারিয়েছে দেশ। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের ১১০ জন এবং জজ কোর্টের দেড় শতাধিক আইনজীবী চলতি বছর মারা গেছেন। যাদের অনেকে দুইটি সমিতির সদস্য ছিলেন।
ব্যবসায়ী
করোনায় মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে দেশের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীও রয়েছেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুল, পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাসেম, ব্যবসায়ী হাজি মকবুল হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী ও সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল নিলুফার মঞ্জুর, এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম।
সাংস্কৃতিক অঙ্গন
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য ২০২০ সালটি শোকে মোড়ানো। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেছে বহু গুণের অধিকারী অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী যাকের, প্লেব্যাক সম্রাট খ্যাত এন্ড্রু কিশোর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, গুণী শিল্পী আব্দুল কাদের, কিংবদন্তী সুরসম্রাট আলাউদ্দিন আলী, নন্দিত অভিনেতা সাদেক বাচ্চু, টেলিভিশন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাবেক সভাপতি নৃত্যশিল্পী হাসান ইমাম।
মুক্তিযোদ্ধা
মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম সিআর দত্ত ও আবু ওসমান চৌধুরী, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবদুল হাই করোনাভাইরাসে মারা গেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
করোনায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মো. মিজানুর রহমানসহ অসংখ্য পুলিশ সদস্য এ বছর মারা গেছেন।
সাংবাদিক
গণমাধ্যমেরও বেশ কয়েকজন প্রাণ দিয়েছেন করোনায়। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান ও বিটিভির সাবেক উপমহাপরিচালক মোস্তফা কামাল সৈয়দ এবং এনটিভি যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহিদ, সাংবাদিক হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী, দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবির খোকন ও জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মাহমুদুল হাকিম অপু।