সন্তান না নেওয়ায় স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যা করলেন ক্ষুব্ধ স্বামী
‘সন্তান না নেওয়ায় ঝগড়া হয়। রাগের মাথায় আমার স্ত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলাটিপে হত্যা করি। স্বজনদের অসুস্থতার খবর দিলেও, তারা না আসায় লাশ পরদিন গভীর রাতে বাসার পাশে অব্যবহৃত টয়লেটের গর্তে বালি চাপা দেই।’
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে স্ত্রী শামসুন্নাহারকে (২৫) হত্যার এমন বর্ণনা দেন স্বামী আব্দুল হামিদ বাবুল।
গত সোমবার বিকেলে সাতকানিয়া উপজেলায় অব্যবহৃত টয়লেটের ট্যাঙ্ক থেকে বালিচাপা দেওয়া অবস্থায় গৃহবধূর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আটক হন ঘাতক স্বামী বাবুল।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন মুহাম্মদ জুনায়েদ আব্দুল হামিদ বাবুলের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান ও পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়ার নয়াপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসা থেকে কাছেই একটি অব্যবহৃত টয়লেটের ট্যাঙ্কি থেকে বালিচাপা দেওয়া অবস্থায় শামসুন্নাহারের লাশ উদ্ধার করে।
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন—নিহতের পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে কেঁওচিয়া নয়াপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসার পার্শ্ববর্তী অব্যবহৃত একটি টয়লেটের ট্যাঙ্ক থেকে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ওই নারীর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই সৈয়দুল হক বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় আটক করা স্বামী বাবুলকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি নিজ থেকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
সূত্রে জানায়, দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্কের পর ১০ বছর আগে শামসুন্নাহারকে বিয়ে করেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বাবুল। বিয়ের পর থেকেই বাবুল শামসুন্নাহারকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। সন্তান না নেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
সর্বশেষ সাতকানিয়ার কেওচিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকাকালে গত ১৪ জুলাই রাত আনুমানিক ১০টায় এ দম্পতির মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। পরে শামসুন্নাহার ঘুমিয়ে গেলেও জেগে থাকেন বাবুল। রাত আনুমানিক ২টায় বাবুল ঘুমন্ত অবস্থায় শামসুন্নাহারকে গলা টিপে ধরলে তিনি মারা যান।
পরদিন সকালে শামসুন্নাহারের বোনকে ফোন করে বাবুল জানান, শামসুন্নাহার অসুস্থ, তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন দেখতে আসেন। কিন্তু, সারা দিনে কেউ না আসায় রাতে অব্যবহৃত টয়লেটের ট্যাঙ্কে শামসুন্নাহারের লাশ ঢুকিয়ে বালি চাপা দেন বাবুল।
পরে শামসুন্নাহারের স্বজনেরা বাসায় আসেন। কাউকে না পেয়ে বাবুলকে ফোন করলে, তিনি এলোমেলো কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে স্বজনেরা কেরানিহাট থেকে কৌশলে তাঁকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শামসুন্নাহারকে হত্যা করে লাশ ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেন বাবুল।