১৬ বছর পর বেড়া পৌর নির্বাচন, জটিলতা থেকেই যাচ্ছে
এলাকা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘ ১৬ বছর বেড়া পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০০১ সালে বেড়া পৌরসভার এলাকা বাড়ানো হয়েছিল। ২০১১ সালে এ সম্প্রসারণের বৈধতাও দেয় উচ্চ আদালত। চার বছরেও এ অংশের ওয়ার্ড ভাগ করতে পারেনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আগামী ২৭ আগস্ট সম্প্রসারিত এলাকা বাদ দিয়েই বেড়া পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে ভবিষ্যতে জটিলতা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বেড়া পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আদেশে সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের কিছু অংশসহ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করমজাহাটকে বেড়া পৌরসভার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। করমজা হাটের অন্তর্ভুক্তিতে রাজস্ব আয় বেড়ে যাওয়ায় ২০০৫ সালে বেড়া পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়।
বেড়া পৌরসভার সম্প্রসারণকে কেন্দ্র করে ২০০২ সালে উচ্চ আদালতে পাল্টাপাল্টি রিট আবেদন করা হলে সীমানা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। সীমানা নিয়ে এই জটিলতার কারণে বন্ধ হয়ে যায় বেড়া পৌরসভার নির্বাচন। ফলে ১৯৯৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত পৌরসভার মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আবদুল বাতেন।
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ২০১১ সালের ৭ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ করমজাহাটসহ সাঁথিয়া উপজেলার আমাইকোলা, দত্তকান্দি ও করমজা নিশিবাড়ীকে বেড়া পৌরসভারই অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে চূড়ান্ত রায় দেন। সেই থেকে এসব স্থান বেড়া পৌরসভার অংশ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
এরপর সীমানা-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হলেও বর্ধিত অংশ নিয়ে ওয়ার্ড ভাগ না হওয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়া থেমেই থাকে। বেড়া পৌরবাসী ওয়ার্ড বিভক্তীকরণ সমস্যার সমাধানসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গত চার বছরেও ওয়ার্ড বিভক্তীকরণ করতে পারেনি।
গত ৩ মার্চ উচ্চ আদালত নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বেড়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন। আদেশ মোতাবেক নির্বাচন কমিশন ৭ জুলাই বেড়া পৌরসভার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ আগস্ট এ পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ জুলাই, প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই ২ আগস্ট এবং প্রত্যাহার ১০ আগস্ট রাখা হয়েছে।
ঘোষিত তফসিল ও উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওয়ার্ড বিভক্তীকরণ না হওয়ায় পৌর এলাকার বর্ধিত অংশ বাদ রেখে পুরনো এলাকা নিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ সম্প্রসারিত এলাকার ভোটাররা এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এতে সম্প্রসারিত এলাকাসহ পৌরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় পৌরবাসী খুশি হলেও সম্প্রসারিত অংশকে বাদ রাখার বিষয়টি মানতে পারছেন না অনেকেই। পৌরবাসীর ধারণা, এভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সীমানা নিয়ে আবারও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
বেড়া মনজুর কাদের মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা বেড়া পৌরসভার নির্বাচনকে স্বাগত জানাই। কিন্তু পৌর এলাকার একটি অংশকে বাইরে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াকে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হচ্ছে না।’
পৌর এলাকার সম্প্রসারিত অংশ দত্তকান্দি মহল্লার ইউসুফ আলী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী আমরা বেড়া পৌরসভার বাসিন্দা। কাজেই আমরা পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।’
বেড়া পৌরসভার মেয়র আবদুল বাতেন বলেন, ‘পৌরসভার নির্বাচন একান্তভাবে আমারও কাম্য। কিন্তু তাই বলে পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য কোনো অংশকে বাদ রেখে নয়। ইতিমধ্যেই পৌরসভার বর্ধিত অংশে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়া করমজা হাটের আয় গোটা পৌর এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখছে। এই হাট থেকে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। এ হাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বেড়া পৌরসভার প্রথম শ্রেণীতে অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।’
বেড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সম্প্রসারিত এলাকা বাদে নয়টি সাধারণ ওয়ার্ড ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’