সাংসদ রানার জামিন নামঞ্জুর, আদালত চত্বরে অস্ত্রধারীরা
টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাংসদ আমানুর রহমান খান রানার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার বিকেল ৪টায় এ আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাকসুদা খানম।
এদিকে, আজ সাংসদ আমানুর রহমান খান রানার আদালতে হাজির হওয়াকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণের বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্রসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মামলার প্রধান আসামি সাংসদ আমানুর রহমান খান রানাকে আদালতে হাজির করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদনের অধিকতর শুনানির আবেদন জানান।
আদালত তাঁদের এই আবেদন আমলে না নিয়ে জামিন আবেদনের ব্যাপারে আদেশের জন্য বিকেল ৪টায় সময় ধার্য করেন। পরে বিকেলে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। একই সঙ্গে সাক্ষী উপস্থিত না থাকায় আদালত আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
এদিকে, আজ সাংসদ আমানুর রহমান খান রানার আদালতে হাজির হওয়াকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাদীপক্ষ ও আসামিপক্ষের লোকজন টাঙ্গাইল আদালত চত্বর ও শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে টাঙ্গাইলের পুলিশ প্রশাসন। আদালত চত্বরে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।
এ অবস্থায় দুপুরের দিকে আদালতের কাছেই টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের কাছে একটি কনফেকশনারি থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও আটটি গুলিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ ছাড়া আদালত চত্বরের কাছে শামছুল হক তোরণের সামনে থেকে দেশীয় অস্ত্রধারী আটজনকে আটক করে পুলিশ।
এ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের পরই বেলা ১১টার দিকে সাংসদ রানার সমর্থকরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের দাবির ব্যানার নিয়ে আদালত চত্বরের কাছে শামসুল হক তোরণের কাছে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা সাংসদ রানার মুক্তি দাবি করে আদালত চত্বরের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা আজ বুধবার সকালে টাঙ্গাইলের আদালতে গেলে তাঁর সমর্থকরা স্লোগান দিতে দিতে আদালতে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ছবি : এনটিভি
এ ব্যাপারে বেলা ৩টার দিকে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় তাঁর সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ‘আদালতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার হাজিরাকে কেন্দ্র করে শহরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ’
অপরদিকে, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচারের দাবিতে আদালত চত্বর ও শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয় এবং মিছিল সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আদালত চত্বর এলাকা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নিহত ফারুক আহমদের স্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনিরের নেতৃত্বে দুপুরে একটি মিছিল বের করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় মামলার বাদী নাহার আহমেদ বলেন, ‘আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলব, আদালত তাঁকে জামিন দিতে পারে না। সে জামিনে নেই, তার পরও যে হাঁক-হুমকি দিচ্ছে, যে ভয় দেখাচ্ছে কাজেই কোনো সাক্ষী আমরা আদালতে হাজির করতে পারব বলে আমাদের মনে হয় না। তার কারণ এত ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাক্ষী প্রস্তুত আছে। কিন্তু সারকামস্টেন্স, টাঙ্গাইল শহরের এই অবস্থা যে প্রতিবন্ধকতা, এই আসামিরা জামিন পাইছে এই কথা ছড়ালে সব সাক্ষী ভয় পেয়ে তারা আদালতে আসে নাই। এটার বিরোধিতা করছেন আসামিপক্ষের উকিলরা। আমাদের আবেদন যে, এই মোকদ্দমাটা একটা তদন্তের সময় আছে, পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দি আছে। তাদের সাক্ষীগুলো সর্বাজ্ঞে নিয়ে মোকদ্দমাটা শুরু করার জন্য আমরা একটা আবেদন করেছি।’
আদালতে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা জানান, আদালত প্রাঙ্গণে অস্ত্রধারীরা সাংসদ রানার সমর্থক কি না, তা তাঁরা নিশ্চিত নন। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এই হত্যায় সাংসদ রানা ও তাঁর ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
এই মামলায় সাংসদ রানা ছাড়াও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪ জন আসামি রয়েছেন।