‘আমি কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নিহত অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, ‘আজ ১১টা দিন হয়ে গেল; অপরাধীদের কোনো সন্ধান, কোনো ক্লু, কোনো তদন্তকারী সংস্থা পাচ্ছে না। আমি কোনো আশার আলোও দেখতে পাচ্ছি না।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আয়োজিত মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন নিহত অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর স্ত্রী হোসনে আরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ওই মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
হোসনে আরা আরো বলেন, ‘আমি আশায় বুক বাঁধছি, আবার মাঝেমধ্যে আমি নিজেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছি যে বিচার পাব কি? এর আগে যে হত্যাকাণ্ডগুলো হলো, তারা তো বিচার পায়নি। একজনেরও তো দেখলাম না ফাঁসি হয়েছে। সুতরাং রেজাউল করিমকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার আমি দেখতে পাব কি না, জানি না।’
অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর মেয়ে শতভী বলেন, ‘যে বিচারহীনতা দেখতে পাচ্ছি, তাতে আমার বলার কিছু নেই। আমি খুব আশাবাদী হতে পারছি না। একের পর এক খুন হয়ে যাচ্ছে, এদের বিচার হচ্ছে না। একটা বিচার না হওয়া মানেই পরবর্তী এ রকম একটা ঘটনাকে উসকানি দেওয়া। অপরাধীরা ভাবে, এ রকম হত্যাকাণ্ড ঘটালে আমাদের কিছুই হবে না। এই সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া উচিত।’
শতভী আরো বলেন, ‘আমার আরেকটা অনুরোধ থাকবে, এই মৃত্যু নিয়ে যেন কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি বা রাজনীতি বা বাণিজ্য না হয়। কারণ, আমি এ রকম হাওয়া বা গন্ধ পাচ্ছি। আর কোনো রকমের ট্যাগ লাগিয়ে মৃত্যুকে জায়েজ করার চেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’
মহাসমাবেশে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তাঁরা আমাদের বলেছেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে অপরাধীদের ধরা সম্ভব হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকার পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষায়, স্থানীয় (রাজশাহী) পুলিশ প্রশাসনের কিছু ভুলের কারণে অপরাধীরা জেনে গেছে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। সে জন্য অপরাধীরা পালিয়ে আছে।’
রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনুর সঞ্চালনায় এবং সমিতির সভাপতি মো. শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোকাদ্দাম হোসেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি নীরেন্দ্র নাথ মোস্তাফী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান, রাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধরণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম, সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন মাতিন প্রমুখ।
গত ২৩ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে টানা ১১ দিনের মতো কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।