প্রশাসন ক্যাডারদের স্মারকলিপি, আলোচনায় সমাধান বললেন সচিব
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমাতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সচিবালয়ে বিবৃতি, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আজ রোববার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই কমিশনের সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানের কাছে লিখিত দাবি-দাওয়া পেশ করেন তাঁরা। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আলোচনায় সমাধান সম্ভব। তিনি আরও বলেন, কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের জন্যই কাজ করেন। তাদের সঙ্গে যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য তৈরি করা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার ব্যাপক ত্যাগের বিনিময়ে এ সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
এদিন সকাল ১০টার আগেই প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ ঢাকার আশে পাশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কয়েকশ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে এসে জড়ো হন। বেলা ১১টার দিকে ৬৪ জেলার পক্ষে ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ জনপ্রশাসন সচিবের বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এরপর বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উল্লাহর নেতৃত্বে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা আরও একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। উভয় স্মারকলিপিতে গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সাবেক সচিব আবদুল মুঈদ চৌধুরীর বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
আবদুল মুঈদ চৌধুরী জনপ্রশাসনের সংস্কার বিষয়ে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জানিয়েছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশে যেসব সুপারিশ করা হবে তার মধ্যে প্রশাসনের বিরাজমান বৈষম্য কমিয়ে আনতে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ ভাগ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ ভাগ কোটা রাখার বিষয়টি থাকবে। পাশাপাশি বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারভূক্ত না করার সুপারিশ করা হবে।
সংস্কার কমিশনের এমন বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে পরদিনই বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন পৃথকভাবে বিবৃতি ও প্রতিবাদলিপি প্রকাশ করে।
গত শনিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় একটি মিলনায়তনে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা পৃথক সমাবেশ করে কর্মসূচি ঘোষণা করে। তারাও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বক্তব্যের বিরোধীতা করে বৈষম্য দূর করে প্রশাসন ক্যাডারের সমান সুযোগ সুবিধা দাবি করে। এ ছাড়া সচিবালয়ে গত সরকারের সময় পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা আজ সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জড়ো হয়ে দ্রূত তাদের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানায়।
আন্দোলন ও বিক্ষোভকারী সব সংগঠনের নেতারাই নিজেদের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দাবি করেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনের একটি স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার হীন উদ্দেশ্যে নানা ধরণের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভি সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কোনো ক্যাডারেরই বিপক্ষে নই। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এখানে এসেছি। দীর্ঘদিনের একটি অব্যবস্থাপনার পর ব্যাপক রক্তের বিনিময়ে এ সরকার দেশে একটি সুশাসন আনার জন্য কাজ করছে। আমরা সরকারের সকল নীতি বাস্তবায়নে কাজ করছি। তবে কোনোকোনো মহল প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে।
অফিস চলাকালীন সরকারি কর্মকর্তারা দপ্তর রেখে এভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণলয়ের সামনে এসে বিক্ষোভ করা ও জটলা পাকানো সরকারি চাকরিবিধির লংঘন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আনোয়ার উল্লাহ বলেন, সচিবালয় থেকে এখানে কিছু কর্মকর্তা কিছুক্ষণের জন্য এসেছিলেন। আমরা স্মারকলিপি দিয়ে আবার নিজনিজ দপ্তরে কাজে ফিরে যাচ্ছি।
আলোচনায় সমাধান উল্লেখ করে বিভিন্ন ক্যাডারদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেছুর রহমান। নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সচিব বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর আগেও তিনটি কমিশন করা হয়েছিল। কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের জন্যই কাজ করেন। তাদের সঙ্গে যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য তৈরি করা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার ব্যাপক ত্যাগের বিনিময়ে এ সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য মোট ছয়টি কমিশন করা হয়েছে। জনপ্রশাসনের সংস্কারের জন্যও একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির একটি ব্রিফিংয়ের কিছু খণ্ডিত বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কমিশনের সুপারিশ নিয়ে প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি অযৌক্তিক কিছু নয়। আমরা এরআগেও বিভিন্ন ক্যাডারের সঙ্গে বসেছি। তাদের বক্তব্য ও কথা শুনেছি ও তাদের সুপারিশ নিয়েছি। আজকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে বসে তাদের বক্তব্য ও সুপারিশ নিয়েছি। আমরা আশা করছি আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে। কারণ, আমরা সবাই একমত, ব্যাপক রক্তের বিনিময়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে তাদের কাছে আমরা দাবি পেশ করার সুযোগ পাচ্ছি। আমরা সবাই প্রশাসনে স্থিতিশীলতা চাই ও দেশের কল্যাণ চাই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, সেটা মেটানো সম্ভব। এ বিষয়ে অ্যাডমিনেষ্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন এর সভাপতি এবং ঢাকার জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক করবে সংস্কার কমিশন। এ সপ্তাহের মধ্যেই দুই পক্ষের দাবি দাওয়া নিয়ে কাছাকাছি একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে কমিশন। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিবেন। এর আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া।