‘আনন্দের আগস্ট’ লেখায় শাবি শিক্ষককে পদাবনতি
আগস্ট মাসকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক শিক্ষককে পদাবনতি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মঞ্জুরুল হায়দার সুমন। তিনি নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হলেও পদাবনতি করে তাঁকে প্রভাষক করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালটির রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষককে ছয় মাসের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা আগামী ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে বলেও জানান রেজিস্ট্রার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এই ছয় মাস বেতন পাবেন ওই শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, শিক্ষক সমাজের কাছে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ ব্যাপারে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে শিক্ষক মঞ্জুরুল হায়দার সুমন বলেন, ‘আগস্ট মাসে আমার ব্যক্তিগত কয়েকটি ইভেন্ট থাকায় আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই। আর সেই স্ট্যাটাস নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে তা আমি ডিলিট করে দেই। আমি আগস্ট মাসকে নিয়ে কোনো কটূক্তি করিনি।’
আপাতত প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে মেনে নিলেও সুবিচারের আশায় কর্তৃপক্ষ বরাবর আপিল করবেন বলেও জানান এই শিক্ষক।
গত ১৫ জুলাই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আগস্ট মাস সম্পর্কে একটি স্ট্যাটাস দেন মঞ্জুরুল হায়দার সুমন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘দিন গুনছি... আসছে আমার আনন্দের আগস্ট।’ লেখাটি দেখে পরের দিন রাতেই ফেসবুকে ওই শিক্ষকের সমালোচনা শুরু করে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির নেতাকর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ জুলাই একাডেমিক ভবনে ঢুকে ওই শিক্ষকের কক্ষে ভাঙচুর করে তারা। তবে সে সময় ওই শিক্ষক কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না।
এদিকে ওই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আগস্ট মাসকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছে- এমন অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী, শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঞ্জুরুল হায়দার সুমনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ২০ জুলাই ওই নোটিশের জবাবও দেন তিনি।
এরপর গতকাল সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠক আহ্বান করে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পদাবনতিসহ অন্য শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে গত ২০ জুলাই কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে এক শিক্ষকের পদাবনতির শাস্তি দেয় সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ‘এফ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার ঘটনায় গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে তাঁর স্বীয় পদ থেকে প্রভাষক পদে পদাবনতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছর ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।