হলের ফি বেশি, আন্দোলনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের বার্ষিক ফি অন্যান্য হলের চেয়ে ছয়গুণ বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হলের শিক্ষার্থীরা। তাদের ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ফুঁসে উঠছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে এর প্রতিবাদের গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছেন হলের হাজারো শিক্ষার্থী। এ ছাড়া, হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের শেষ নেই। তাঁরা আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, বর্ধিত এই ফি বাড়ানোর বিরোধিতা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। এরই মধ্য তারা এ ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে হলের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারিং করেছে। এসব সংগঠন আগামীতে নতুন কর্মসূচি দেবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর বিজয় একাত্তর হলের নোটিশ বোর্ডে একটি বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হয়। এতে বলা হয়, আগামী এক বছরের জন্য ওই হলের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ফি হিসেবে পরিশোধ করতে হবে তিন হাজার ৬০০ টাকা। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে হলের সিট ‘অটো’ বাতিল হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য আবাসিক হলগুলোয় এ ফির পরিমাণ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বলে জানা গেছে। হলের শিক্ষার্থীরা জানান, অন্যান্য হলের চেয়ে ছয়গুণ বেশি ফি দেওয়া তাদের মতো নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আন্দোলনে যাবেন তাঁরা।
হল প্রশাসনের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গভীর রাতে বিনা কারণে হলের প্রতিটি রুমে আবাসিক শিক্ষক দিয়ে তল্লাশি, শিক্ষার্থীরা নিজ রুমে গেস্ট রাখতে চাইলে হল প্রশাসন থেকে অনুমতি নেওয়ার পাশাপাশি ১০০ টাকা জমা দিতে হবে, হলের ক্যান্টিনে দামের তুলনায় খাবারের মান খারাপ, তুচ্ছ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা ইত্যাদি।
জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ মিলে এ ফি নির্ধারণ করেছে। গেল বছর শিক্ষার্থীরা ভর্তির সময় তিন হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছে এবং প্রতিবছর তা দিতে হবে। এ ধরনের ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে নির্ধারণ করা হয়েছে।
হলের রুমে রুমে তল্লাশির বিষয়ে প্রভোস্ট বলেন, হলে অনেক ছাত্র নেশা করে, অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে। হলের ছাত্রদের অভিযোগের ভিত্তিতে আবাসিক শিক্ষকরা তল্লাশি করেন। হলে গেস্ট রাখলে অনুমতি ও ফি দিতে হয়। কারণ বহিরাগতদের হলে রাত কাটানোর নিয়ম নেই।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল হিসেবে সর্বশেষ হলো ‘বিজয় একাত্তর’; এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০তম হল। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় এ হলের। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের মাঝখানে ১১ তলার এ হলের দক্ষিণে ও উত্তরে দুটি ভবন রয়েছে। এতে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন।
চলতি বছরের ১৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে সব সম্প্রদায়ের ছাত্রদের বসবাসের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এটি কার্যকর হবে। তবে হলের শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।
হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদত বলেন, ‘ছাত্রলীগ যেহেতু ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করে সেহেতু ছাত্রদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলে থাকে। তুলনামূলকভাবে এ হলের বার্ষিক ফি অন্যান্য হলের চেয়ে বেশি। তাই আমরা হল প্রশাসনকে ফির টাকার পরিমাণ কমানোর কথা বলব।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সব হলে বার্ষিক ফি একই রকম হয় না। একেক হলে একেক পরিমাণ ফি নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু ‘বিজয় একাত্তর’ হলটি নতুন সেহেতু অবকাঠামো নির্মাণে বেশি খরচ হয়েছে। তাই এ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফি কমানো হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, হল প্রশাসন বিষয়টি নির্ধারণ করবে।