শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি অভিযোগ আনায় শাস্তি দাবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও প্রাধ্যক্ষ পরিষদ। এ সময় তাঁরা অভিযোগকারী ছাত্রী ছাত্রলীগকর্মীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
আজ মঙ্গলবার অভিযোগ ওঠা শিক্ষকের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেন রোকেয়া হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এদিকে ওই শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রভোস্ট কাউন্সিল এবং রোকেয়া হলের ১৬৫ শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত আলাদা দুটি চিঠিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত রোববার এক ছাত্রী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার আগে রাবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করেন। একই দাবিতে গত সোমবার তাঁরা ক্যাম্পাসে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেন।
অভিযোগ ওঠা শিক্ষক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ টি এম রফিকুল ইসলাম। তিনি বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক। অভিযোগকারী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা (উর্দু) বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী। এই ছাত্রী বেগম রোকেয়া হলে গেস্ট কার্ড নিয়ে থাকেন।
রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৩ নভেম্বর ওই ছাত্রী সাংগঠনিক পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে হলের সিট দাবি করেন। তবে ওই শিক্ষক ও প্রাধ্যক্ষ সিট প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। সেখানে ছাত্রলীগ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
অভিযোগে আরো বলা হয়, গত ১৬ ডিসেম্বর হলের বিজয় র্যালি উদযাপন শেষে খাবার বিতরণ করার সময় ওই ছাত্রীকে খাবার গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এমনকি ওই শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর দেখা বা কথা হয়েছে এমনটি হলের কারো নজরে পড়েনি। রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ একবারে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এই অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযোগকারী ছাত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষের প্যাডে করা এই অভিযোগে স্বাক্ষর করেন হলের আবাসিক শিক্ষক রনক জাহান, কাজী ইমরুল কায়েস, উপরেজিস্ট্রার প্রণব কুমার বিশ্বাস, সেকশন অফিসার আবুল কালাম আজাদ, হিসাব সহকারী পিয়ারুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারী নূরুল ইসলাম, সেকশন অফিসার শামিমা আকতার, পিয়ন আলাউদ্দিন শেখ, সিনিয়র সহকারী শাহানা সুলতানা, ডেপুটি রেজিস্ট্রার ঝর্ণা রানী গুণ, সহকারী রেজিস্ট্রার মকবুল হোসেন ও অফিস পিয়ন ফারুক আক্তার। এ ছাড়া অভিযোগের সঙ্গে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, ‘গত ২৩ নভেম্বর আমি হলের কক্ষে সিটের জন্য হল প্রাধ্যক্ষের সাথে দেখা করতে যাই। সেখানে হলের ওই আবাসিক শিক্ষক ছিলেন। তাঁরা সিট দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমি আমার সাংগঠনিক পরিচয় প্রদান করি। এ সময় ওই শিক্ষক আমাকে এবং ছাত্রলীগ সম্পর্কে প্রাধ্যক্ষের সামনেই কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।’
ছাত্রী অভিযোগে বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর র্যালি শেষ করে হলে ফিরতে দেরি হয় এবং হল গেটে ওই শিক্ষক আমাকে প্রাধ্যক্ষের রুমে দেখা করতে বলেন। রুমে গেলে প্রথমেই তিনি আমাকে বলেন, ‘শুধু ছাত্রলীগ করলেই কি হলে সিট হবে? হলে সিটের জন্য আমাদের কাছে আসতে হবে।’ এ সময় তার কথাবার্তা এবং শারীরিক প্রকাশভঙ্গি ছিল আপত্তিকর ও অশোভনীয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘গত রোববার অধ্যাপক এ টি এম রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রী অভিযোগ দেন। এরপর আজ (মঙ্গলবার) ওই শিক্ষকের পক্ষে রোকেয়া হলের ১৬৫ ছাত্রীদের স্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগ পেয়েছি। এদিকে প্রভোস্ট কাউন্সিলও অভিযুক্ত শিক্ষককে নির্দোষ দাবি করে চিঠি দিয়েছে। আমরা সব পক্ষের অভিযোগকে খতিয়ে দেখে খুব শিগগির সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’