শুভ জন্মদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আজ ১২ জানুয়ারি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) দিবস। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল এর আগেই, একই বছরের ৪ জানুয়ারি। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের তারিখ অনুসারে প্রতিবছর ১২ জানুয়ারিকেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি।
১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট তৎকালীন সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ঢাকার পূর্ব নাম জাহাঙ্গীরনগরের নামানুসারে রাজধানী ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। পরে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস হলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রাখা হয়।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে চার দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুরুতে মাত্র চারটি বিভাগ (অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান) নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় ও যুগের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১৫০ এবং শিক্ষক ছিলেন মাত্র ২৩ জন। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতার সমবয়সী এ বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন রসায়নবিদ অধ্যাপক মফিজউদ্দিন আহমেদ। একে একে ১৮ জন উপাচার্য এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে দেশের প্রথম নারী উপাচার্য। ২০১৪ সালের ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম উপাচার্য পদে নিয়োগ পান নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
প্রায় আড়াই যুগ ধরে অতিথি পাখির জন্য অধিক পরিচিত সাভারে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছরই শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে জীববৈচিত্র্যে ভরপুর বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপার সৌন্দর্যের মাঝে প্রতি শীতে সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসে পরিযায়ী পাখির দল। এ সময় পাখি দেখতে ক্যাম্পাসে ভিড় করেন অসংখ্য দর্শনার্থী।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসেবে ৫২ ফুট ব্যস ও ৭১ ফুট উচ্চতার শহীদ মিনার। এর স্থপতি রবিউল হুসাইন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে রয়েছে বিখ্যাত স্থপতি হামিদুজ্জামানের নকশায় মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘সংশপ্তক’। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে কিছুটা এগিয়ে সামনে গেলেই চোখে পড়বে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘অমর একুশে’। এর স্থপতি হামিদুর রহমান।
বাংলা নাটকের শিকড়সন্ধানী নাট্যকার নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন ছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক। বাংলা নাটকে নতুন মাত্রা যোগ করেন তিনি। এখানে রয়েছে তাঁরই নাম অনুসারে একটি মুক্তমঞ্চ। সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অধিকাংশই এ মুক্তমঞ্চকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অত্যন্ত যৌক্তিক কিছু আন্দোলনের ঐতিহ্য এবং প্রায় সব আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও ছিলেন সচেতন, বলিষ্ঠ, নির্ভীক ও প্রতিবাদমুখর। তেমনই একটি আন্দোলন হচ্ছে নব্বই দশকে ঘটে যাওয়া ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয় অপরাধীরা। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রণীত হয়েছে ‘যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা’।
একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুবিধার্থে নির্মাণাধীনসহ মোট ১৬টি আবাসিক হল রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে প্রতিষ্ঠার চার দশকের বেশি পার হলেও আবাসিক হলগুলোতে তীব্র আবাসন সংকট বিদ্যমান। এ ছাড়া পরিবহন সংকট, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবসহ অন্যান্য সমস্যা তো আছেই।
৪৫ বছরের পথচলায় শিক্ষা ও গবেষণা খাতে অসামান্য মেধার প্রমাণ রেখেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অতীতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও দেশ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অবদান রেখে চলেছেন তাঁরা। নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতার মাঝেও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মাঝে লাল অবয়বে ভিন্ন স্বকীয়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
সবার প্রত্যাশা, নানা সমস্যা ডিঙিয়ে সাফল্যের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। শুভ জন্মদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।