জাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষক সমিতির ২০১৬ সালের নির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, ৫০৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছে ৪৭৬ জন। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৫টি পদের বিপরীতে অনুষ্ঠিত হলো এ নির্বাচন।
গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা একজোট হয়ে নির্বাচন করে পদগুলো ভাগাভাগি করে নেন। তবে এবার দুই পক্ষের শিক্ষকরা আলাদা দুটি প্যানেলে নির্বাচন করছেন।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ প্যানেল এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শিক্ষকদের প্যানেল’ নামে নির্বাচন করছেন। তবে বামপন্থী শিক্ষকরা এবারের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে কোনো প্যানেল ঘোষণা করেননি।
নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী প্যানেল থেকে বিভিন্ন পদে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁরা হলেন- সভাপতি পদে অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদার (পরিসংখ্যান বিভাগ), সহসভাপতি পদে অধ্যাপক ড. আবদুস ছালাম, সাধারণ সম্পাদক পদে সহযোগী অধ্যাপক বশির আহমেদ (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), কোষাধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার (নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ) এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে সহকারী অধ্যাপক হোসনে আরা বেবী (বাংলা বিভাগ)।
একই প্যানেল থেকে সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অধ্যাপক শেখ মনজুরুল হক (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ), অধ্যাপক ড. খবির উদ্দিন (পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ), অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ), অধ্যাপক ড. অসিত বরণ পাল (প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ), অধ্যাপক ড. কৌশিক সাহা (রসায়ন বিভাগ), অধ্যাপক ড. খালেদ হোসাইন (বাংলা বিভাগ), অধ্যাপক ড. শাহেদুর রশিদ (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ), সহযোগী অধ্যাপক ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ (মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ), সহকারী অধ্যাপক মো. ওয়াহিদুজ্জামান ও প্রভাষক মো. রবিউল ইসলাম (আইন ও বিচার বিভাগ)।
অন্যদিকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শিক্ষকদের প্যানেল’ থেকে যাঁরা নির্বাচন করছেন তাঁরা হলেন- সভাপতি অধ্যাপক ড. শামছুল আল সেলিম (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), সহসভাপতি পদে অধ্যাপক ড. ফিরোজা হোসেন (উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ), সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান (দর্শন বিভাগ), কোষাধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মামুন হোসেন (রসায়ন বিভাগ) এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ)।
তা ছাড়া একই প্যানেল থেকে নির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- অধ্যাপক ড. আবেদা সুলতানা (গণিত বিভাগ), সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম (পরিবেশ বিজ্ঞান), সহযোগী অধ্যাপক মাসুম শাহরিয়ার (ফার্মেসি বিভাগ), অধ্যাপক মাহবুব কবির (রসায়ন বিভাগ), সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ নজরুল ইসলাম (গণিত বিভাগ), অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার (ফার্মেসি বিভাগ), সহযোগী অধ্যাপক জামাল উদ্দীন রুনু (পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ), অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ), অধ্যাপক ড. মো. মনজুর ইলাহী (দর্শন বিভাগ) এবং অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা (বাংলা বিভাগ)।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৩ সালে সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেনবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা জোটবদ্ধ হয়ে অন্দোলন করেন। তার পরবর্তী দুটি শিক্ষক সমিতি নির্বাচনেও তাঁরা একসাথে নির্বাচন করেন। ‘সমঝোতা’ করে ১৫টি পদের মধ্যে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা নয়টি ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা ছয়টি করে পদ ভাগাভাগি করে নেন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ ও বামপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সে নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত চারজনসহ ওই প্যানেল থেকে আটজন শিক্ষক জয়লাভ করেন। অপরদিকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা নির্বাচনে ৩৩টি পদের মধ্যে ২৫টি পদে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
বর্তমানে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় গ্রুপ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজে শিক্ষক সংখ্যা তিন শতাধিক। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামে রয়েছেন মাত্র একানব্বই জন শিক্ষক। আর সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মতিন গ্রুপসহ প্রশাসনবিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের কয়েকটি গ্রুপ এবং বামপন্থী শিক্ষক ও রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন এমন শিক্ষক রয়েছেন দেড় শতাধিক।