জাবির সিন্ডিকেটে অন্তঃকোন্দলেই বিএনপিপন্থীদের ভরাডুবি!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচনে শতভাগ জয় পেয়েছে সরকারপন্থীরা। বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিভিন্ন নির্বাচনে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হলেও সিন্ডিকেট নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মতাবলম্বী শিক্ষকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করেও শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে তাঁদের।
বিগত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে মোট ১৫টি পদের মধ্যে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা পেয়েছিলেন সাতটি পদ। গত মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া চারটি অনুষদের ডিন নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। নবনির্বাচিত সিন্ডিকেটের আগের সিন্ডিকেটেও বিএনপিপন্থী দুজন শিক্ষক সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। কিন্তু এই সিন্ডিকেট নির্বাচনে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের শোচনীয় হারের কারণ হিসেবে দায়ী মনে করা হচ্ছে তাঁদের ভেতরকার অন্তঃকোন্দলকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫ জুনের নির্বাচনের আগে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এককভাবে জাতীয়তাবাদী প্যানেলে নির্বাচন করা হবে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মতাবলম্বী শিক্ষকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করা হবে এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে তৈরি হয় মতদ্বৈধতা।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. শামছুল আলম, অধ্যাপক মো. শরিফ উদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তারসহ বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একাংশ বিভিন্ন মতাবলম্বী শিক্ষকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন।
অন্যদিকে অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ছালেহ আহমেদ খান, অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মানছুর, অধ্যাপক ফিরোজা হোসেনসহ প্রায় ১৫-১৬ জন শিক্ষক এককভাবে জাতীয়তাবাদী প্যানেলে নির্বাচনের পক্ষ নেন। নির্বাচনের আগে এ গ্রুপের পক্ষ থেকে জোটবদ্ধ নির্বাচনের বিরেধিতা করে প্রচারপত্র ও বিলি করা হয়।
বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ মনে করছে মতদ্বৈধতা তৈরি হওয়ায় এ গ্রুপটি নির্বাচনে প্রশাসনপন্থীদের পক্ষ নিয়েছেন।
অন্যদিকে নির্বাচনের আগে জোটবদ্ধ নির্বাচনের পক্ষপাতী শিক্ষকরা ভেবেছিলেন, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ এবং বামপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করলে বেশিসংখ্যক পদ পাওয়া যাবে। তবে নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটাতে এ সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাসে শিক্ষক রাজনীতির অঙ্গনে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
নির্বাচনে ভরাডুবির পেছনে কী কারণ থাকতে পারে তা জানতে চাইলে অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘বিগত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করে ১৫টি পদের মধ্যে আমরা সাতটি পদ পেয়েছি। রুট লেভেলে আমাদের প্রতি সমর্থন রয়েছে। এককভাবে নির্বাচন করাটা আদর্শিক ব্যাপার। এককভাবে নির্বাচন করলে সিন্ডিকেটেও আমরা ভালো করতে পারতাম। এ জন্য একমাত্র জাতীয়তাবাদী ফোরামের নেতারা দায়ী। সাধারণ সভায় ৮০ শতাংশ শিক্ষক এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও নেতারা সম্মিলিতভাবে নির্বাচনের পক্ষ নেন।’
অপরদিকে জোটবদ্ধ হয়েও জেতা যায়নি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয়তাবাদী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম সেলিম বলেন, ‘প্রশাসনের বিভিন্ন মেকানিজমের কারণেই জেতা সম্ভব হয়নি। আমাদের একটা অংশ এক সাইড হয়ে গেছে। তা ছাড়া প্রশাসন দলীয় বিবেচনায় প্রচুর পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে, যার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করা যাচ্ছে না।’
জাতীয়তাবাদী ফোরামের এ দুই প্রভাবশালী শিক্ষক বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মধ্যকার মতদ্বৈধতাকে সরাসরি অন্তঃকোন্দল বলতে রাজি হননি।