মদের টাকা জোগাতে ইজিবাইক চালককে হত্যা, গ্রেপ্তার ৪
ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার মঠবাড়ি এলাকায় মদের টাকা সংগ্রহ করতে পরিকল্পিতভাবে ইজিবাইকচালক শাকিলকে হত্যা করেছে একটি গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল শনিবার চারজনকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ।
আজ রোববার (২১ মে) রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান।
গ্রেপ্তাররা হলেন জনি (২০), শারাফাত (২০), ইব্রাহিম চান (২১) ও সাব্বির হোসেন মেহেদী (২২)। পরে গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা সুইসগিয়ার চাকু, আসামিদের ব্যবহৃত রক্তমাখা সিএনজি ও লুণ্ঠিত ইজিবাইক জব্দ করা হয়।
এসপি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “গত শুক্রবার (১৯ মে) সকাল ৬টার দিকে স্থানীয়রা দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় ফোন করে জানায়, মঠবাড়ী পদ্মা রেলওয়ে সেতুর নিচে পরিত্যক্ত ইটখোলার ভেতরে একটি গলাকাটা মরদেহ পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। এরপর জানা যায় মরদেহটি একই ইউনিয়নের পালিরা গ্রামের মৃত সিদ্দিক মিয়ার ছেলে শাকিলের (১৭)। পরে পরিবারের সদস্যরা এসে মরদেহ শনাক্ত করে।”
পুলিশকে পরিবারের সদস্যরা জানান, শাকিল দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা ছোটবেলায় মারা যায়। শাকিলের অসুস্থ মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে থাকত। নিজের পড়াশোনা, মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ মেটাতে শাকিল স্কুল শেষে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ইজিবাইক চালাত। গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিকেলে ইজিবাইক নিয়ে বের হলেও রাতে শাকিল আর বাসায় ফিরে আসেনি।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করার সময় পুলিশ দেখতে পায়, নিহত শাকিলেকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথা দেহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। পিঠে ১১ স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। পেটের ডান পাশে ছুরিকাঘাত করায় নাড়ি ভুড়ি বের হয়ে গেছে। এ ঘটনায় শাকিলের বড় বোন সীমা (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্তে নেমে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িতরা নিজেদের দায় স্বীকার করেছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, “হত্যায় জড়িত এই গ্যাংয়ের সদস্যরা সবাই মাদকাসক্ত। গত (১৮ মে) পরিকল্পনা করে একটা ইজিবাইক ছিনতাই করবে তারা। এরপর সেটির ব্যাটারি বিক্রির টাকা দিয়ে মদের পার্টি করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ মে সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার ইব্রাহিম চানের সিএনজি নিয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের কাউটাইল ঘাটে টার্গেট ইজিবাইকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পরবর্তীতে কোনো ইজিবাইক না পেয়ে শরাফত ও জনি কাটাইল ঘাট এলাকা থেকে সামনে এগিয়ে গিয়ে শাকিলকে পায়। শাকিল জনির পূর্ব পরিচিত হওয়ায় শাকিলকে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া সহজ হয়। পরে জনি, শারাফাত ও সাব্বির ইজিবাইক নিয়ে মঠবাড়ী পরিত্যক্ত ইটখোলায় যায়। অপরদিকে ইব্রাহিম চান সিএনজি নিয়ে পিছু পিছু আসে। ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্রই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শারাফাত সুযোগ বুঝে সুইসগিয়ার দিয়ে শাকিলের গলায় টান দেন। এতে শাকিল ইজিবাইক থেকে পড়ে যায় এবং গলা চেপে ধরে চিৎকার শুরু করে। তখন জানি পেছন থেকে শাকিলের পিঠে এলোপাতাড়ি চাকু মারতে থাকে। কিন্তু তারপরও শাকিল চিৎকার ও দাপাদাপি করতে থাকায় জনি, সাব্বির ও ইব্রাহিম চান শাকিলের মাথা ও হাত-পা চেপে ধরে এবং শরাফাত শাকিলকে সুইসগিয়ার দিয়ে মাথার সামনে-পেছনে জবাই করে মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর শরাফত, জনি ও ইব্রাহিম চান সিএনজিতে করে চলে যায়। আর সাব্বির নিহত শাকিলের ইজিবাইক নিয়ে চলে যায়। মূলত আসামিদের মদের পার্টির টাকার জন্যই তারা পূর্বপরিচিত ইজিবাইক চালক শাকিলকে হত্যা করে।”