সালাহ উদ্দিন কথা মনে রাখতে পারছেন না : জনি
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ মানসিকভাবে সুস্থ নন, কিছুক্ষণ আগের কথাও তিনি স্মরণ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি।
urgentPhoto
আজ রোববার দুপুরে পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিন আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে আব্দুল লতিফ জনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে তিনি (সালাহ উদ্দিন) স্মৃতিভ্রমে ভুগছেন। কিছুক্ষণ আগের কথাও তিনি মনে করতে পারছেন না এবং একই কথা পুনরুক্তি করছেন। তাঁর কথা জড়িয়ে যাচ্ছে এবং অনেক কিছুই তিনি স্পষ্টভাবে বলতে পারছেন না।’
‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ এখনো ভীত-সন্ত্রস্ত্র ও বিক্ষিপ্ত’ উল্লেখ করে জনি বলেন, ‘প্রবল মানসিক চাপের কারণে হয়তো স্মৃতিভ্রমের ঘটনা ঘটছে। সালাহ উদ্দিন আহমেদ বারবারই তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদের কথা জিজ্ঞেস করছেন এবং তিনি কখন শিলংয়ে আসবেন সেই বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন।
আব্দুল লতিফ জনিকে সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি এখনো ভালোভাবে ঘুমাতে পারছেন না। এ ছাড়া তাঁর চর্ম ও কিডনি সমস্যার পাশাপাশি কোমড়ের ব্যথাও অব্যাহত আছে।
‘সালাহ উদ্দিনের কিডনির একটিসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা হয়েছে। সোমবার সব রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।’ যোগ করেন বিএনপি সহ-প্তর সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়গুলো নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তাদের অনুরোধ করেছি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করার জন্য এবং তাঁর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য।’
আজ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের সাথে তাঁর এক ভাতিজাও দেখা করেন। এ সময় সালাহ উদ্দিন তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন।
এ ছাড়া আব্দুল লতিফ জনি জানিয়েছেন, সালাউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি বিষয়টি নিয়ে মেঘালয় পুলিশের সাথে আলোচনা হয়েছে। তিনি যে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতেন সেটিও পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসকের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই তাঁকে আদালতে নেওয়া হবে।
এদিকে মেঘালয় রাজ্য পুলিশের ডিজিপি রাজীব মেহতার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, ‘এভাবে তো তাঁকে সিঙ্গাপুর নেওয়া যাবে না। আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
রাজীব মেহতা আরো জানান, পুলিশ এখনো তাঁর সাথে কথা বলেনি। তবে যথাসময়ে সালাহ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তিনি কীভাবে কাগজপত্র ছাড়াই এখানে এলেন, বা কে তাঁকে নিয়ে এসেছে- এসব বিষয় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সালাহ উদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশে সমর্পণের ব্যাপারে পুলিশকে এখরো কোনো নির্দেশ দেয়নি বলেও জানান মেঘালয়ের এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, আদালত যদি এমন কোনো নির্দেশ দেন, তাহলে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ডাউকির আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর বিএসএফই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) অনুরোধ জানাবে সালাহ উদ্দিনকে তাদের হেফাজতে নিতে।
ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারায় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ধারায় তার পাঁচ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ঢাকা ইউনিট এই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে।
এদিকে পুলিশের আইজি এ কে এম শহিদুল হক এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন সালাহ উদ্দিন ভারতীয় পুলিশের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১০ মার্চ উত্তরা থেকে নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ১২ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে খোঁজ মেলে সালাহ উদ্দিনের। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেখানে।