রম্য
যানজটের হাফ ডজন সুবিধা!
যানজট আমাদের জন্য চরম আতঙ্কের একটি বিষয়। আর রমজানে ইফতারের আগে কিংবা ঈদ করতে বাড়ি ফেরার পথে যানজটের কবলে পড়ি আমরা! অথচ সামান্য মাথা খাটালেই বোঝা যায়, যানজটের কত সুবিধা! এই যেমন, ‘বুদ্ধিহীনের ঢেঁকি’ (!) এই রম্যলেখক ‘মাথা না খাটিয়েই’ (!) যানজটের হাফ ডজন সুবিধা আবিষ্কার করে বসেছেন! তাই এবার পড়তে শুরু করুন!
সুবিধা নম্বর ১
আপনি একজন ঘুমকাতুরে মানুষ। প্রতিদিন দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা রীতিমতো আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ১০টার আগে আপনাকে অফিসে হাজির হতেই হবে! অথচ আপনি ঘুম থেকেই উঠতে উঠতেই ৯টা পেরিয়ে যায়! ১০টায় অফিসে গিয়ে হাজির হবেন কী করে! আর এখানেই যানজটের সুবিধা! আপনি ৯টায় ঘুম থেকে উঠে ধীরস্থিরে অফিসের উদ্দেশে রওনা দিয়ে প্রায় ১১টায় গিয়ে হাজির হলেন! বস দেরি করার কারণ জিজ্ঞেস করার আগেই যানজটের উদ্দেশে ঝাল ঝাড়তে শুরু করুন, ‘সেই ৮টায় বাসা থেকে বেরিয়েছি! ভেবেছিলাম, আজ অফিসে তাড়াতাড়ি এসে বাড়তি কিছু কাজ করব! অথচ মরার যানজটে পড়ে আমার মূল্যবান অফিস সময় নষ্ট!’ নিশ্চিত থাকুন, বস আর কৈফিয়ত চাইতে আসবেন না!
সুবিধা নম্বর ২
পকেটমার তো চেনেন? এই পকেটমাররা মানুষের তাড়াহুড়োর জন্য ঠিকমতো পকেটমারিং করতে পারে না! কী দুঃখ বেচারাদের! কিন্তু যানজট তাদের জন্য ব্যাপক হারে আশীর্বাদ! যানজটে সবকিছু স্থির হয়ে যায়। মানুষের গতি থমকে দাঁড়ায়। পকেটমাররা তখন আরামসে তাদের মারিংয়ের কাজ সারতে পারে! চিন্তা করেন, যানজট দেশের পকেটমার গোষ্ঠীর আয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কী নিঃস্বার্থ অবদান রেখে চলেছে! জয়তু যানজট!
সুবিধা নম্বর ৩
প্রেম করছেন আপনি। কিন্তু এটা-সেটা নানা কাজে প্রেমিকাকে সময়ই দিতে পারেন না! এতে আপনার প্রেমিকা অন্য আরেকজনের দিকে দৃষ্টি দেয় দেয় অবস্থা! এ অবস্থায় যানজট আপনার জন্য ব্যাপক সুবিধা নিয়ে হাজির! যানজটে বসে গাড়ি গোনা ছাড়া আর কাজ আছে কোনো? নেই! অতএব, এই অপ্রত্যাশিত ‘অবসরে’ ফোন দিন প্রেমিকাকে! কথা বলুন মন খুলে! ঠিকিয়ে রাখুন প্রেমের স্থায়িত্ব! ধন্যবাদ দিন যানজটকে!
সুবিধা নম্বর ৪
আপনি একজন কবি বা ছড়াকার মানুষ। এটা-সেটা নানা বিষয় নিয়ে ছড়া বা কবিতা লেখা আপনার কাজ। যানজটে বসে আছেন। হুট করে যানজট নিয়ে জম্পেশ একটা কবিতা বা ছড়া চলে এলো আপনার মাথায়! অথবা পাশের রিকশায় বসা কোনো ললনার দীর্ঘ কালো কেশ দেখে টপাটপ আপনার মস্তিষ্কের নেটওয়ার্কে ধরা দিল ‘শক্তিশালী’ কোনো কবিতা বা ছড়া! দারুণ না! এ ছাড়া তো আরো কত বিষয় নিয়ে যানজটে বসে কবিতা বা ছড়া লিখতে পারেন, তার কোনো হিসাবই নেই আসলে! ওহ, যানজট!
সুবিধা নম্বর ৫
আপনি একজন রম্যলেখক। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আপনাকে রম্য লিখতে হয়। পড়ে গেলেন যানজটে, পেয়ে গেলেন হট ইস্যু! আরে মশাই, বাসায় গিয়ে ‘একদিন যানজটে’ শিরোনামে জম্পেশ, দুর্দান্ত, হাস্যরসে ভরপুর একটি কাহিনী মস্তিষ্ক থেকে ডাউনলোড করা তখন আপনার জন্য ডালভাত ব্যাপার!
সুবিধা নম্বর ৬
আপনি একটি পত্রিকা বা অনলাইনের রম্য বিভাগের সম্পাদক। প্রতি সপ্তাহে (অনলাইনে প্রতিদিন) এই-সেই ইস্যু বের করে তার ওপর আপনাকে রম্য বিভাগটি বের করতে হয়। কিন্তু ফান করার মতো ইস্যু বের করা যে কত কঠিন, তা রম্য বিভাগের সম্পাদক মাত্রই অনুধাবন করতে পারেন! তো, আপনি একদিন সামনের রম্য বিভাগের বিষয় কী হবে, তা নিয়ে গভীর চিন্তায় যখন হাবুডুবু খাচ্ছিলেন, তখনই পড়ে গেলেন যানজটে! তারপর মোটামুটি উচ্চ স্বরেই দিলেন চিক্কুর, ‘বিষয় পাইয়া গেছি রে! যানজট নিয়াই এবার আয়োজন করব!’