রম্য
টিভিতে ঈদ অনুষ্ঠানমালায় ‘বৈচিত্র্য’ আনতে করণীয়!
ঈদ আসতে আর বেশি বাকি নেই। আর ঈদ মানেই টিভি চ্যানেলগুলোতে নানা রকম সব অনুষ্ঠান। কিন্তু গৎবাঁধা সেসব অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এসে টিভি চ্যানেলগুলো আরো যেসব ‘বৈচিত্র্যময়’ অনুষ্ঠানমালা দেখাতে পারে, তা বয়ান করা হয়েছে এখানে।
ঈদের আগের রাত
রাত ১১টা : সরাসরি অনুষ্ঠান ‘ঈদের দিন ঘুম থেকে ওঠার সহজ উপায়’
(এই অনুষ্ঠানের পরামর্শক থাকবেন প্রতিদিন ঘুম থেকে দেরিতে উঠে অফিসে গিয়ে বসের ঝাড়ি খাওয়া কোনো ব্যক্তিত্ব!)
ঈদের দিন
সকাল সাড়ে ৬টা : সচেতনতামূলক সরাসরি অনুষ্ঠান ‘কোলাকুলি করার সময় যেভাবে সংঘর্ষ এড়াবেন’
(এই অনুষ্ঠানে হালকা, পাতলা, বডি বিল্ডার, হেংলা তথা সব ধরনের মানুষের সঙ্গে কীভাবে সংঘর্ষ এড়িয়ে কোলাকুলি করবেন, তা সরাসরি দেখানো হবে।)
সকাল ৭টা : ‘যেভাবে আপনি ঈদগাহে যাবেন’
(এই অনুষ্ঠানে কীভাবে জামায়াত শেষের আগেই ঈদগাহে যেতে হবে, কীভাবে হেঁটে যেতে হবে, সব বর্ণনা করা হবে।)
সকাল সাড়ে ৭টা : ছোটদের জন্য অনুষ্ঠান ‘ঈদ সালামি আদায়ের কৌশল’
(এই অনুষ্ঠানে কীভাবে বড়দের কাছ থেকে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে ঈদ সালামি আদায় করা যায়, তা ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হবে। একই সঙ্গে কেউ যাতে জাল নোট গছিয়ে দিতে না পারে, সে জন্য জাল নোট চেনার উপায়ও শেখানো হবে এই অনুষ্ঠানে।)
সকাল ৮টা : গৃহিণীদের জন্য অনুষ্ঠান ‘যেভাবে নতুন পদ্ধতিতে সুস্বাদু লুচি-সন্দেশ বানাবেন’
(এই অনুষ্ঠানে লুচি ও সন্দেশ বানানোর নতুন পদ্ধতি বর্ণনা করবেন বিশিষ্ট কোনোও সংগীতশিল্পী! জি, সংগীতশিল্পীর কথাই বলা হয়েছে! কারণ আজকাল রন্ধনশিল্পী গান গায় আর সংগীতশিল্পীকে দিয়ে রান্নার অনুষ্ঠান করানো হয়!)
সকাল ১০টা : তরুণী ও নারীদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান ‘যেভাবে ঝটপট সাজুগুজো করবেন’
(এই অনুষ্ঠানে ‘মাত্র’ আড়াই ঘণ্টায় কীভাবে ‘ঝটপট’ সাজুগুজো করে সবাইকে চমকে দেবেন, তা দেখানো হবে।)
দুপুর ১২টা : খাদ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘খান, তবে সাবধান!’
(এই অনুষ্ঠানে ঘরে রান্না করা সুস্বাদু সব খাবার দেখে ঝাঁপিয়ে না পড়ে কীভাবে খেলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে, মানে টয়লেটের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব তৈরি হবে না, তা বুঝিয়ে দেওয়া হবে!)
বেলা ৩টা : ‘কোথায় যাবেন? গেলে করণীয়’
(এই অনুষ্ঠানে ঈদের আনন্দে কোথায় ঘুরে বেড়ানো যায়, তা বর্ণনা করা হবে। একই সঙ্গে গেলে আপনাকে যেসব বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে। এই যেমন, পথে হঠাৎ করে কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে আপনার ছোট পিচ্চিটা যদি সালামি চেয়ে বসে, তখন কীভাবে পরিস্থিতির সামাল দেবেন প্রভৃতি।)
সন্ধ্যা ৭টা : নারীদের জন্য অনুষ্ঠান ‘খোশগল্পে যেভাবে নিজেকে মেলে ধরবেন’
(এই অনুষ্ঠানে কী করে পাশের বাসার আপার কাছে নিজের দামি দামি শাড়ি, ড্রেস, গয়নার কথা কৌশলে খোশগল্পের মাধ্যমে বলে দেয়া যায়, তা শেখানো হবে।)’
রাত ৮টা : বাচ্চা-কাচ্চাদের জন্য অনুষ্ঠান ‘যা পেলাম, যেভাবে পেলাম’
(এই অনুষ্ঠানে সারা দিনে বাচ্চা-কাচ্চারা কার কাছ থেকে কত টাকা সালামি পেয়েছে, কীভাবে পেয়েছে, তা বেশ কয়েকজন বাচ্চার সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ণিত হবে। বড়দের জন্য এই অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ।)
রাত ১১টা : স্বামী-স্ত্রীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান ‘পরদিনের পরিকল্পনা’
(এই অনুষ্ঠানে ঈদের পরদিন কী কী করা হবে, স্ত্রীর বাপের বাড়ি থেকে কারা কারা আসবে, তারা এলে তাদের কীভাবে ‘যথাযথ’ সম্মান দিতে হবে, কীভাবে স্ত্রীর কথা বিনা প্রশ্নে মেনে নিয়ে সংসারে শান্তি বজায় থাকতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।)
রাত ১২টা : ঈদের বিশেষ টক শো ‘ইস্যুহীন এই ঈদে’
(এই টক শোতে টকবাজদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। তারা অযথা ক্যাচাল পাড়বেন, মানুষের বিরক্তির উদ্রেক ঘটাবেন। এই টক শো দেখে মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ঘুমোতে যাবে। মূলত মানুষকে দ্রুত ঘুমানোর তাগিদ দেবে এই টক শো!)।
এভাবে ঈদের দ্বিতীয়, তৃতীয় দিনের জন্য নিজেদের মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানমালা দিয়ে মানুষকে বিনোদিত করতে পারে টিভি চ্যানেলগুলো।