রম্য
ঈদে যাদের পুরস্কার প্রাপ্য!
আজ ঈদের তৃতীয় দিন। এবারের ঈদে অনেক ব্যক্তিই অনেক রকমভাবে ‘দুর্দান্ত’ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন! সেটা বিবেচনা করে অনেককেই দেওয়া উচিত পুরস্কার।
গৃহকর্তা
এই বেচারাকে ঈদে পুরস্কার না দিলে শুধু অন্যায় নয়, মহা-অন্যায় হবে! কেন গৃহকর্তা বেচারাকে ঈদের পুরস্কার দেওয়া হবে? বেচারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, ৯-৫টা অফিস করে, কত কষ্ট করে টাকা আয় করেন। অথচ বেচারার বউ ঈদ এলেই সব ভুলে গিয়ে মনের সুখে শপিংয়ে লিপ্ত হন! তাও যেনতেন শপিং নয়, দামি দামি সব শাড়ি, গহনা, ড্রেস এই-সেই কত কি যে উনি কেনেন! শপিংয়ের নামে বউয়ের এই ‘টাকা ওড়ানো’ দেখেও গৃহকর্তা মহাশয় যে মাথা ঠান্ডা রাখেন, তারপরও কি তিনি একটা পুরস্কার পেতে পারেন না?
গৃহকর্ত্রী
না, ভুল বুঝবেন না! ওনাকেও ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হিসেবে এই ঈদে একটা পুরস্কার দেওয়া যেতেই পারে! উনি রমজানের ১৫ দিন যেতে না যেতেই শপিংয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন! ব্যাপক ‘পরিশ্রম করে’ এক শাড়ির জন্য ১০০ দোকান ঘুরে, স্বামী বেচারাকে কলুর বলদ মনে করে এত্তগুলা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে কি অসীম ধৈর্য সহকারে যে শপিং করেন! আহা! এমন ধৈর্যশীল মানুষ আপনি কোথায় পাবেন? সুতরাং উনিও পাচ্ছেন একটি বিশেষ পুরস্কার!
সালামি দেনেওয়ালা
আপনি পুরস্কারের তালিকা থেকে ওনাদের বাদ দিলে ব্যাপক অন্যায় করবেন কিন্তু! ঈদের দিন সকাল থেকে টানা পাঁচদিন ওনারা কষ্টকে লুকিয়ে হাসিমুখে ঈদ সালামি দিয়েই যান! এটা কি কম বড় বিষয়! হাসিমুখে বেশ কিছু টাকা সালামি হিসেবে দেওয়ার কারণে ওনাদেরও ঈদে পুরস্কার দেওয়া যায়!
প্রেমিক
এই বেচারা তো প্রেম করে মহাবিপদেই পড়ছে! প্রেমিকার আবদারে এই বেচারার জান শেষ! এই ঈদে প্রেমিকাকে নানা কিছু কিনে দিতে গিয়ে বেচারার মানিব্যাগের হালুয়া একেবারেই টাইট হয়ে গেছে! একবার ভাবুন তো, নিজে ঈদের কাপড় না কিনে প্রেমিকাকে কিনে দেয়, এই ব্যক্তি কতটা ‘মহৎ’ হতে পারে! আমাদের তো ভাবতেই কান্না আসছে! এই ব্যক্তিকে এবারের ঈদে পুরস্কার দিতেই হবে!
প্রেমিকা
বেচারির ‘প্রেমিক’ মোট সাতজনা! দারুণ দক্ষতায় তাদেরকে সামলে নেন বেচারি! এই ঈদে রহিম, করিম, মন্টু, ঝন্টু প্রমুখ ‘প্রেমিকদের’ নানা মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে-ভালিয়ে, ‘প্রেম’ ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বেচারি সবার কাছ থেকেই লেটেস্ট ফ্যাশনের সব ড্রেস আদায় করে নিয়েছেন! আহা! কী দক্ষ উনি! কী বিচক্ষণ! ওনাকে পুরস্কার না দিলে পুরস্কার জিনিসটারই অপমান হবে!
বাড়ি ফেরা ব্যক্তি
ঈদের জন্য শহর ছেড়ে অসংখ্য মানুষ বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বাড়ি ফেরাটা যে কি ঝক্কি-ঝামেলার, কী ভোগান্তির, তা বাড়ি যাঁরা ফেরেন, তারাই বুঝতে পারেন! টিকেটের জন্য ‘যুদ্ধ’ করে, তা পেয়ে, গাট্টিবোঁচকা বেঁধে খানাখন্দে ভরপুর সড়কে ঈদের ‘স্পেশাল’ লক্কড়ঝক্কড় বাসে করে ওনারা বাড়ি ফেরেন। মধ্যখানে যানজট নামক অশান্তিতে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা! তবু তাদের বাড়ি ফেরা থেকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না! চিন্তা করছেন! কত বড় অর্জন তাদের! এদের কাছে তো সুপারম্যানও ফেইল! সুতরাং পুরস্কার পাচ্ছেন এরাও!
টিভির দর্শক
চমকে উঠবেন না! এই শ্রেণির মানুষকে পুরস্কার দেওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে! কারণটা হচ্ছে, উনি বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে ঈদের ‘বিশেষ বস্তাপচা’ অনুষ্ঠান দেখার জন্য ব্যাপক আগ্রহ সহকারে টিভিতে চোখ রাখেন! চিন্তা করে দেখুন, টিভির অনুষ্ঠান দেখার প্রতি কতটা মমত্ববোধ থাকলে একজন মানুষ এত আগ্রহ দেখাতে পারেন! থাক, চিন্তা করার দরকার নেই! আমাদের দৃষ্টিতে উনিও পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য!
রম্যলেখক
হুম! এদেরকে বাদ দিয়ে পুরস্কার জিনিসটা এই ঈদে বেখাপ্পাই লাগবে! কারণ হচ্ছে, ইনারা কোনো রকম ঈদ বোনাস-টোনাস না পেয়েও নিজের মস্তিষ্ককে ব্যাপক চাপা-চুপা দিয়া আইডিয়া বের করে ফান ম্যাগাজিন পাতা ভরান কিংবা ফান বিভাগের লেখার অভাব মেটান! ওনারা আইডিয়া না বের করলে পত্রিকা বা অনলাইনের ‘রম্য বিভাগ’-এর যে কী হতো! এঁদের মতো মহান ব্যক্তি কোথায় পাবেন আপনি! আর এঁদেরকে পুরস্কার না দিয়ে কী করে থাকবেন আপনি!
রম্য বিভাগের সম্পাদক
বিশেষ কারণে এঁদেরকেও এই ঈদে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে! এঁরা ফান লেখকদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঈদ বোনাস-টোনাস না দিয়ে ঈদসংখ্যার জন্য লেখা আদায় করে নেন! কতটা কৌশলী আর বুদ্ধিমান ইনারা, চিন্তাতেও কুলাচ্ছে না! তাইলে এঁদেরকে পুরস্কার দেওয়া থেকে কোন যুক্তিতে বাদ রাখবেন আপনি?! থাকছেন এরাও!