পতনে পুঁজিবাজার, কেনাবেচায় সতর্কতা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক নানা কর্মসূচির কারণে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির অবস্থায় রয়েছে। সেই প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারেও পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবারও (২ নভেম্বর) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচকের পতন হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইজে আটকে আছে। এরপরও বৃহস্পতিবার দুই-একটি বাদে বাকি খাতগুলোর বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। শেয়ার বিক্রির চাপে এদিন লেনদেন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশের পরিবেশ একটু অন্যরকম থাকতে পারে। তবে সেটাতে পুঁজিবাজারে ততটা প্রভাব পড়বে না। তবে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা করার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে বিনিয়োগকারীকে এ ব্যাপারে তাদের পেশাদারিত্ব থাকতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচি দিচ্ছে জানিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এসবের প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়তে পারে। তবে এটা সাময়িক। বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচাতে আরও সতর্ক হতে হবে।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, ডিএসইতে বৃহস্পতিবার সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়ার চেয়ে কমেছে বেশি। তবে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৪৪৩ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগেরদিন বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৩৭২ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৬৭ দশমিক ৯০ পয়েন্টে। ডিএসইএস সূচক ১ দশমিক ২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৯ দশমিক ১৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএস-৩০ সূচক দশমিক ২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৬টির ও কমেছে ৮৪টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ১৭৩টির।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৫ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর এমারেল্ড অয়েলের ৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচের ১৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, শমরিতা হাসপাতালের ১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, বিচ হ্যাচারীর ১১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, জেমিনি সী ফুডের ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, লাফার্জ-হোলসিমের ৯ কোটি ১ লাখ টাকা এবং খান ব্রাদার্সের ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
এদিন সর্বোচ্চ দর বাড়ার শীর্ষে উঠে এসেছে আজিজ পাইপসের শেয়ার। শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ১০১ টাকা ৬০ পয়সায়। আগের দিন বুধবার দর ছিল ৯২ টাকা ৪০ পয়সা। একদিনের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯ টাকা ২০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া দর বাড়ার শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে খান ব্রাদার্সের ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, খুলনা প্রিন্টিংয়ের ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুডের ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, মিরাকলের ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমারের ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, সেন্ট্রাল ফার্মার ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ, জেমিনি সী ফুডের ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ, দেশবন্ধু পলিমারের ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং বেঙ্গল উইন্ডসোরের শেয়ার দর ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশের শেয়ার দর বেড়েছে।
এদিন সর্বোচ্চ দর কমার শীর্ষে ছিল মুন্নু এগ্রোর শেয়ার। শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ৬৫৫ টাকা। যা আগেরদিন বুধবার দর ছিল ৮৪৮ টাকা ৭০ পয়সা। একদিনের ব্যবধানে শেয়ারটির দর কমেছে ১৯৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ২২ দশমিক ৮২ শতাংশ। এছাড়া দর পতনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাপটিক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, আরএন স্পিনিংয়ের ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, ফার কেমিক্যালের ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, সিএপিএম আইবিবিএল ফান্ডের ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, এমবি ফার্মার ৬ দশমিক ২১ শতাংশ, শমরিতা হসপিটালের ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ, এমারেল্ড অয়েলের ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং তসরিফার ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশের শেয়ার দর কমেছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বৃহস্পতিবার ১১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস বুধবার যেখানে লেনদেন হয়েছিল ৫ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার। প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৩ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৩ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই৫০ সূচক দশমিক ২৭ পয়েন্ট, সিএসই৩০ সূচক ৭ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১০ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৮১ পয়েন্ট করে কমেছে।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৫০ কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৩৩টির এবং কমেছে ৪৮টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ৬৯টির। এদিন লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমারেল্ড অয়েলের ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং ফুডের ৯৫ লাখ টাকা, প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ৮৪ লাখ টাকা, সিএনএ টেক্সের ৬৮ লাখ টাকা, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৭ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ১৯ লাখ টাকা, অগ্নি সিস্টেমসের ১৪ লাখ টাকা, শমরিতা হাসপাতালের ১৩ লাখ টাকা এবং খান ব্রাদার্সের ১১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।