শীর্ষ দশের আশি ভাগই দুর্বল কোম্পানির শেয়ার
বিদায়ী সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। আলোচিত সপ্তাহে লেনদেন পরিমাণ কমেছে। একই সাথে কমেছে বাজার মূলধন। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন বেশি হয়েছে। মোট লেনদেনের ৩৩ শতাংশই দশ কোম্পানির দখলে রয়েছে। শীর্ষ ১০ কোম্পানির লেনদেনে ৮০ শতাংশই ‘বি’ ক্যাটাগরি বা দুর্বল কোম্পানির শেয়ার।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, গেল সপ্তায় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯০৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের সপ্তায় লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪০০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৬৩টির, দর কমেছে ৯২টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২২২টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ২৭টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে প্রধান সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২২৩ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৩ দশমিক ২১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০৮ দশমিক ৩২ পয়েন্টে।
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭১ হাজার ৮১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৭২ হাজার ৪৯১ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৬৭৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গেল সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। বাকি ২০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। এই দশ কোম্পানি লেনদেন করেছে ৬৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরির খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের লেনদেন করেছে ৮৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।
এছাড়া সেন্ট্রাল ফার্মার (বি ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমারের (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুডের (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, সী পার্ল বিচের (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্যাসিফিক ডেনিমসের (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুডের (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, এমারেল্ড অয়েলের (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক৭৯ শতাংশ, জেমিনি সী ফুডের (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের (বি ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৯৫ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।