আরাধ্য শিরোপা জিতে ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাস
একটি শিরোপার জন্য কতশত অপেক্ষা। কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢেলেও ছোঁয়া হয়নি রূপালি ট্রফি। দুবার শিরোপা মঞ্চে উঠে ফিরতে হয় শূন্য হাতে। ইংল্যান্ডে আধিপত্য রেখেও ইউরোপসেরা হওয়ার তকমা মেলেনি। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! তৃতীয়বার ফাইনালে উঠে অধরা স্বপ্ন জয় করল ম্যানচেস্টার সিটি। ইন্টার মিলানকে হারিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজমুকুট পরল পেপ গার্দিওয়ালার ম্যানচেস্টার সিটি।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে বড় মহারণ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। সেই লিগের চ্যাম্পিয়ন এবার ইংলিশ জায়ান্ট সিটি। ইস্তানবুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ১-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার এই মর্যাদা অর্জন করল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলটি। দলের জয়ের ইতিহাস গড়া গোলটি করেছেন রদ্রি।
শুধুমাত্র ইউরোপসেরা নয়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টাইটেল ম্যানসিটিকে এনে দিয়েছে আরেকটি অমরত্ব। প্রথমবার ইউরোপজয়ের পাশাপাশি ট্রেবল জয়ের ইতিহাস গড়ল সিটি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে এক মৌসুমে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতলেন রদ্রি-আর্লিং হলান্ডরা।
ফাইনালের আগে কথার লড়াইয়ে সবাই এগিয়ে রেখেছিল সিটিকে। রাখবেই বা না কেন? ধারেভারে সবদিক থেকেই যে এগিয়েছিল সিটি। তবে ইন্টারের ইতিহাস ছিল সমৃদ্ধ। সিটি যেখানে অতীতে একবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেনি, সেখানে ইন্টার তিনবার জিতেছিল এই ট্রফি। তাই তাদের হারানোর ভয় ছিল না। অনেকটা নির্ভার হয়েই মাঠে ধরা দেয় ইন্টার মিলান। আক্রমণে বরং উত্তাপ ছড়িয়েছে ইন্টারই। কিন্তু মেলেনি শুধু গোলের দেখা।
পুরো ম্যাচে ৪৪ ভাগ সময় বল দখলে রেখে ১৪ বার আক্রমণে যায় ইন্টার। যার মধ্যে ছয়টিই ছিল অনটার্গেট শট। বিপরীতে সাতবার আক্রমণে যাওয়া সিটির অনটার্গেট শট ছিল চারটি। তাতেই হয়ে যায় বাজিমাত।
আন্ডারডগ থাকা ইন্টার প্রথমার্ধে খুব একটা সুযোগই দেয়নি সিটিকে। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে রদ্রির পাসে বল পাওয়া বের্নার্দো সিলভার বাঁ পায়ের শট অল্পের জন্য জালের দেখা পায়নি। পাল্টা আক্রমণে ১২ মিনিটের মাথায় মাত্তিও দারমিয়ানের পাসে হেড নেন লাওতারো মার্টিনেজ। তবে সিটির গোলরক্ষক এডারসনের বাধায় তা যায়নি ঠিকানায়।
২৭তম মিনিটে বড় সুযোগটি পায় সিটি। প্রতিপক্ষের ডি বক্সের বা দিক থেকে ডি ব্রুইনের পাস পেয়ে শট নেন হলান্ড। কিন্তু ইন্টারের গোলকিপার আন্দ্রে ওনানার দৃঢ়তায় বৃথা যায় হলান্ডের চেষ্টা। বিরতির আগে আর তেমন সুযোগ গড়তে পারেনি সিটি। উল্টো প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় ইন্টার। তাতে প্রথমার্ধ কাটে গোলশূন্যতে।
বিরতির পরও একই গতিতে ছুটছিল সব। ৫৯ মিনিটে সিটির ডি বক্সের কাছ থেকে সুযোগ হাতছাড়া করেন মার্টিনেজ। ফ্রি কিক পেয়ে সেটাও কাজে লাগাতে পারেনি ইতালিয়ানরা। এর মধ্যেই ৬৮তম মিনিটে দৃশ্যপট পাল্টে দেন রদ্রি।
প্রতিপক্ষের ডি বক্সের জটলায় হঠাৎ ইন্টারকে স্তব্ধ করে দেন রদ্রি। সতীর্থের পাস পেয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন বের্নার্দো সিলভা। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে বল পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি চলে যায়। ওই মুহূর্তে ইন্টারের খেলোয়াড়রা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুটে গিয়ে বিনা বাধায় বল ঠিকানায় পাঠান রদ্রি। উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে আকাশী নীলরা।
পরে মিনিটেই অবশ্য সুযোগ ছিল ইন্টারের সমতায় ফেরার। কিন্তু ফেদেরিকো দিমার্কোর হেড বাধা পায় ক্রসবারে। আবারও হেড নেন তিনি, কিন্তু এবার নিজ দলের তারকা লুকাকুর পায়ে লেগে বল ফিরে আসে। এরপর দফায় দফায় চেষ্টা করেও আর সমতায় ফেরা হয়নি ইন্টারের।
শেষ দিকে যোগ করা সময়ে আরেকটি বড় সুযোগ আসে ইতালিয়ানদের সামনে। কিন্তু রবিন গোজেন্সের হেড ঠেকিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির নায়ক বনে যান গোলরক্ষক এদেরসন। তাতেই প্রথমবারের মতো ইউরোপসেরার মুকুট নিয়ে বাড়ি ফেরে পেপ গার্দিওয়ালার শিষ্যরা।