স্বপ্নজয়ের পরেও পা মাটিতে রাখছেন হল্যান্ড
রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পর নীল সমুদ্রে পরিণত হয় ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়াম। চারিদিকে নীল উৎসব। হঠাৎ ক্যামেরার ফ্রেম একজনের দিকে। তিনি আর্লিং হল্যান্ড। একা একা হেঁটে আসছেন। যেন লম্বা সময় সমুদ্রে ছুটে চলা জাহাজকে তীরে ভিড়িয়ে বেরিয়ে আসছেন নাবিক। শনিবার (১০ জুন) রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাজয়ী ম্যানচেস্টার সিটির নাবিক তো আক্ষরিক অর্থে তিনিই ছিলেন মৌসুমজুড়ে।
প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বাদ পাওয়া সিটির হয়ে নিজের প্রথম মৌসুমটা দুর্দান্ত কেটেছে হল্যান্ডের, যাতে পূর্ণতা এনেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রূপালি ট্রফিটা। যে ট্রফি জয়ের স্বপ্ন তিনি দেখে আসছেন বহুদিন থেকেই। ফাইনালের আগে জানিয়েছিলেন, একটা সময় নিজের ফোনের রিংটোনই ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সংগীতটা।
চলতি মৌসুমে ঐতিহাসিক ট্রেবল জিতেছে ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটি। প্রিমিযার লিগ, এফএ কাপের কাপ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়। ১৯৯৯ সালে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর দ্বিতীয় কোনো ইংলিশ ক্লাব হিসেবে সিটি জিতেছে এই ট্রেবল। সেখানে হল্যান্ডের অবদান ৫৩ ম্যাচে ৫২ গোল। চলতি মৌসুমে ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচে ১২ গোল করে সবার শীর্ষে। প্রিমিয়ার লিগে ৩৫ ম্যাচে ৩৬ গোল করে যথারীতি লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। পাশাপাশি আট গোলে সহায়তা। এফএ কাপ জয়ে অবদান রেখেছেন চার ম্যাচে তিন গোল করে।
সব ছাপিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগই যে মুখ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক শব্দে বর্ণনা করে বলে দিলেন— ‘অবিশ্বাস্য।’ ম্যাচ শেষে বিটি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হল্যান্ড বলেন, ‘অবিশ্বাস্য। আমার পুরো জীবনের স্বপ্ন ছিল এটি। নরওয়ের ছোট্ট শহর থেকে উঠে আসা আমার কাছে এটি স্বপ্নপূরণ। আমি ভীষণ খুশি। আমি নিজেকে চিনি। আগামী কয়েকদিন জয়ের এই অনুভূতিটা থেকে যাবে।’
ফাইনালে পাদপ্রদীপের সবটুকু আলো তার ওপর থাকলেও গোল করতে ব্যর্থ তিনি। তা নিয়ে অবশ্য মাথাব্যথা নেই তার। ‘আমি দুটো গোল পেতে পারতাম। কিন্তু এটি এখন আমার কাছে গুরুত্বহীন। ফাইনালে জিততে পারাটাই আসল।’
বয়স সবে ২২। এখনই দুরন্ত হল্যান্ড। সামনে অনেকটা পথ রয়ে গেছে। শেখার আছে অনেক কিছু। নিজেই বললেন সে কথা, ‘আমার আরও উন্নতি করতে হবে। বয়স মাত্র ২২। আমি এখনও তরুণ। অনেক দূর যেতে হবে আমাকে।’
আর্লিং হল্যান্ড যে দুরন্ত গতিতে এগুচ্ছেন, তাতে বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারেন। রীতিমতো উড়ছেন তিনি। তবু পা যে মাটিতে রাখতে জানেন, তার কথাতেই তা স্পষ্ট।