এয়ার পিউরিফায়ারের প্রয়োজনীয়তা
বাতাসের নিম্ন মানের জন্য জনবহুল ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় প্রায় সময়ই র্যাঙ্কিয়ে থাকে। অস্বাস্থ্যকর এই বাতাসের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উপক্রম ঘটে বিভিন্ন রোগব্যাধির। এই বায়ু দূষণ থেকে ঘরকে নিরাপদে রাখতে প্রযুক্তির সব থেকে সময়োপযোগী অনুদানটি হচ্ছে এয়ার পিউরিফায়ার। নতুন বছরে ইলেক্ট্রনিক বাজারে এগুলোর চলমান কিছু ব্র্যান্ড ও তাদের ফিচার নিয়েই আজকের নিবন্ধ। চলুন, তার পূর্বে এই আধুনিক ডিভাইসের সুবিধা এবং কেনার ক্ষেত্রে যাচাইয়ের কয়েকটি মানদণ্ডের বিশ্লেষণ দিয়ে শুরু করা যাক।
এয়ার পিউরিফায়ারের সুবিধা
শহরের বাতাস যেভাবে ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে, সেখানে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ঘর নিতান্ত অবধারিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় বাসা-বাড়ির বাতাস পরিশোধনের সবচেয়ে অপরিহার্য কাজটি করে এয়ার পিউরিফায়ার। ডিভাইসটির প্রধানত বাতাসে থাকা বিভিন্ন ধরণের দূষিত পদার্থকে ধ্বংস করে। আর এরই সূত্র ধরে পরবর্তীতে আসে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতাগুলো।
উদ্বায়ী জৈব যৌগ, ধোঁয়া এবং রাসায়নিক ধোঁয়ার মতো নানা ধরণের ক্ষতিকারক পদার্থ ঘরের ভেতরে থাকতে পারে। এয়ার পিউরিফায়ারের অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ফিল্টার এই দূষকগুলোকে নির্মূল করে। কোনো কোনো ডিভাইসে ইউভি (আল্ট্রাভায়োলেট)-সি লাইট বা আয়োনাইজার এর মতো উন্নত প্রযুক্তি থাকে। এটি বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দূর করার জন্য পুরো ঘরকে রীতিমত দূর্গে পরিণত করে। বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করা বাতাসে প্রায়ই ধুলো, পরাগ এবং পশুপাখির পশমের মতো অ্যালার্জেন থাকে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
অনেক পিউরিফায়ারে এইচইপিএ (হাই এফিশিয়েন্সি পার্টিকুলেট এয়ার) বা হেপা ফিল্টার থাকে। এই ফিল্টারে যাবতীয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা ধরা পড়ে বিধায় অ্যালার্জি এবং হাঁপানির আক্রমণের ঝুঁকি থাকে না। এভাবে ডিভাইসটি পরিষ্কার বায়ুপ্রবাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা করে।
এয়ার পিউরিফায়ার কেনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি
কারিগরি দিক থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসটির বৈশিষ্ট্যগত বিষয় রয়েছে, যেগুলো উপরোক্ত সুবিধাগুলোর শতভাগ নিশ্চিত করে। ক্রয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পূর্বে সেই দিকগুলো সুক্ষ্মভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। এই নিরীক্ষণটি সম্পন্ন করা যেতে পারে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে-
কভারেজ এলাকা এবং সিএডিআর
এয়ার পিউরিফায়ার কেনার পূর্বপরিকল্পনায় প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হবে ঘরের পরিসর। ডিভাইসটি পুরো ঘরের বাতাস কার্যকরভাবে পরিষ্কার করতে পারবে কিনা তার জন্য এই স্থিতিমাপটি প্রয়োজন। আর এখানেই আসে সিএডিআর বা ক্লিন এয়ার ডেলিভারি দরের অনুষঙ্গ। এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট আবদ্ধ স্থানে ডিভাইসের বাতাস পরিষ্কার করার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। কক্ষের আকার এবং সিএডিআর-এর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা মানেই বায়ু পরিশোধনে অকার্যকারিতা, সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও অর্থ দুটোরই অপচয়।
ফিল্টার প্রযুক্তি
পিউরিফায়ারের ফিল্টার সিস্টেম বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। যেমন হেপা, অ্যাক্টিভেটেড কার্বন, এবং আয়োনাইজার। প্রতিটিরই রয়েছে পৃথক উদ্দেশ্য এবং বাতাসের দূষক দূরীকরণের নিজস্ব পদ্ধতি। হেপা ফিল্টার ব্যাপনের মাধ্যমে অ্যালার্জেন ও ছোট কণাগুলো আটকায়, আর সক্রিয় কার্বন গন্ধ ও ক্ষতিকারক গ্যাস দূর করে। আয়োনাইজার জমাকৃত বিদ্যুতের চার্জ দিয়ে পশুপাখির পশম ও উদ্ভিজ্জ পরাগকে আটকে ফেলে।
আওয়াজের মাত্রা এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের কার্যকারিতা
অপারেশন মুডে থাকার সময় ডিভাইসের আওয়াজ প্রায়শই দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে মাস শেষে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের চাপ বিড়ম্বনার কারণ হয়। আর পুরো বিনিয়োগটাই বৃথা হয় যখন দেখা যায় যে, এত বিল জমার পরেও বায়ু দূষণমুক্ত হচ্ছে না। তাই কম ডেসিবেল রেটিং এবং এনার্জি-এফিশিয়েন্ট ডিজাইনের মডেলের দিকে নজর দেওয়া উচিত। এগুলো একই সাথে নয়েজ ফ্রি এবং সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।
উন্নত প্রযুক্তি
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিউরিফায়ারগুলো নিত্য নতুন গ্যাজেটে সজ্জিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মোবাইল অ্যাপ সংযোগ, রিয়েল-টাইম এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং এবং পরিবর্তনযোগ্য মুড। এই উদ্ভাবনাগুলো ডিভাইসের সাধারণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে আরও উপযোগী করে তোলে। বিশেষত বাতাসের মান যত কমে এই প্রযুক্তিগুলোরও প্রয়োজনীয়তা ততটাই টের পাওয়া যায়। তাছাড়া এর সঙ্গে গ্রাহক কত সহজে ডিভাইসটি চালাতে পারছেন সে বিষয়টিও জড়িত। বলাই বাহুল্য যে, এরকম অতিরিক্ত সংযুক্তির ধারাবাহিকতায় ডিভাইসের দামটাও বাড়তে থাকে।
রক্ষণাবেক্ষণ এবং ফিল্টার প্রতিস্থাপন খরচ
কেনার সময় এককালীন মূল্য থেকে পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণে বেশি খরচ চলে যাচ্ছে কিনা তার হিসাব করাটা জরুরি। বিভিন্ন সময়ে ডিভাইসের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বিশেষ করে ফিল্টার প্রতিস্থাপনের দরকার পড়ে। অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ও এইচইপিএ ফিল্টার ঘন ঘন প্রতিস্থাপন করতে হয়, অপরদিকে প্রি-ফিল্টার ও আয়োনাইজার ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এই পর্যালোচনা সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি যৌক্তিক ও বাজেট উপযোগী সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।