মক্কার ক্রেন ট্র্যাজেডি আল্লাহর ইচ্ছায়, দাবি প্রকৌশলীর
সৌদি আরবে ক্রেন দুর্ঘটনা ‘আল্লাহর ইচ্ছায়’ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নির্মাণকাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের এক প্রকৌশলী। তাঁর দাবি, ক্রেনটি যে অবস্থায় ছিল, তা পুরোপুরি নিয়ম মেনেই রাখা ছিল। সেখানে কোনো যান্ত্রিক বা কারিগরি সমস্যা ছিল না। তাই যা ঘটেছে, তা পুরোপুরি আল্লাহর ইশারায় ঘটেছে।
মসজিদ আল-হারামের নির্মাণকাজের দায়িত্বে রয়েছে ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিন লাদেন গ্রুপ। শুক্রবার সৌদি আরবের আল-হারাম মসজিদের ওপর থেকে একটি ক্রেন ছিঁড়ে পড়ে অন্তত ১০৭ জন হজযাত্রী মারা যান। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো ২৩৮ জন। এ দুর্ঘটনার জন্য যখন কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করা হচ্ছে, তখন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের এক প্রকৌশলী এমন মন্তব্য করলেন।
এদিকে, সৌদি বাদশাহ সালমান এই ক্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার আহতদের হাসপাতালে দেখতে যান বাদশাহ। এ ছাড়া দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার সব কারণ তদন্ত করা হবে এবং তদন্তের ফলাফল নাগরিকদের জানানো হবে।’
শুক্রবার প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস ও ভারি বৃষ্টির পর আল-হারাম মসজিদের ওপরে নির্মাণকাজের জন্য রাখা একটি ক্রেন ব্যাপক শব্দে ভেঙে পড়ে। ইউটিউবে পোস্ট করা ভিডিও ও ফেসবুক-টুইটারে ছড়িয়ে পড়া ছবি থেকে দেখা যায়, এর পর মসজিদের মেঝেতে বহু দেহ ও রক্ত পড়ে আছে।
প্রতিবছর বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালন করতে মক্কায় যান। মসজিদ আল-হারামে ফি বছরই হাজির সংখ্যা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এই চাপ সামাল দেওয়ার অংশ হিসেবে মসজিদটির সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার ভেঙে পড়া ক্রেনটি সেই নির্মাণকাজেরই অংশ।
মসজিদ আল-হারাম পরিচিত গ্র্যান্ড মস্ক নামেও। ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা এটি। মসজিদের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে কাবা শরিফ।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, মসজিদে নববী ও আল-হারাম মসজিদের মুখপাত্র মোহাম্মাদ আল মানসুরি এ দুর্ঘটনার জন্য শক্তিশালী বালুঝড়, বাতাস ও প্রবল বৃষ্টিকে দায়ী করেছেন।
তবে মক্কায় আল-হারাম মসজিদে ক্রেন দুর্ঘটনার জন্য সৌদি সরকার বা কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণাকারী সংস্থা ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইরফান আল আলাওয়ি। তিনি সৌদি কর্মকর্তাদের অসতর্কতার কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘তাঁরা এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদের যত্নের ব্যাপারে গুরুত্ব দেননি। এমনকি তাঁরা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দেননি।’
এর আগে ২০০৬ সালের ১২ জানুয়ারি আরেক দুর্ঘটনা ঘটে মক্কায়। সেদিন জামারাত সেতু থেকে নামার সময় পদদলিত হয়ে মারা যান অন্তত ৩৪০ জন হজযাত্রী। এ সময় আহত হন আরো অন্তত ২৯০ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে হজের সময় মক্কায় এ রকম নানা দুর্ঘটনা ঘটেছে।