স্পেনের বন্যাদুর্গত এলাকায় পাঠানো হচ্ছে আরও ১০ হাজার সেনা ও পুলিশ
স্পেনের পূর্বাঞ্চলীয় ভ্যালেন্সিয়া এলাকায় ভয়াবহ বন্যায় ২১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে অংশ নিতে আরও ১০ হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্য পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। খবর এএফপির।
গত কয়েক যুগে ইউরোপে সৃষ্টি হওয়া সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে এটিকে অন্যতম ভয়াবহ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্টি হওয়া এই বন্যায় কাদাপানির স্রোত শহরের পর শহর এবং সেখানকার অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
এই বন্যায় মৃত্যুর ঘটনা বেশি হয়েছে ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে। এখানে কয়েক হাজার জরুরি বিভাগের কর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এখনও ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে কাদার মধ্য থেকে মরদেহ উদ্ধারে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এক টেলিভিশন ভাষণে এই বন্যাকে গত এক শতকে ইউরোপে হওয়া বন্যার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বন্যায় ত্রাণকাজে অংশ নেওয়ার জন্য আরও ব্যাপক হারে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য পাঠানোর কথাও জানান।
সানচেজ জানান, কেন্দ্রীয় সরকার ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলের নেতার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আরও পাঁচ হাজার সৈন্য এবং পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য দুর্গ এলাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও জানান, শান্তিকালীন সময়ে এটাই স্পেনের সবচেয়ে বড় সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের ঘটনা।
এদিকে, উদ্ধার ও ত্রাণকাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার এমন সব ছোট শহর ও গ্রামকে যেগুলোতে খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে গত মঙ্গলবারের মুষলধারে বৃষ্টির কারণে। এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
এদিকে, বন্যা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা কাজ না করায় কর্তৃপক্ষের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে এবং ভুক্তভোগী অনেক এলাকাবাসী দুর্যোগ পরবর্তী সাড়াপ্রদান কার্যক্রমে ধীরগতির অভিযোগ তুলেছেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, ‘সাড়া প্রদানের কাজ পর্যাপ্ত নয়, এই বিষয়টি আমি জানি। সেখানে সমস্যা আছে এবং অনেক কিছুর ঘাটতি রয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম কাদায় ঢেকে গেছে, মরিয়া হয়ে লোকজন তাদের আতীয়স্বজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমাদের এই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে।’
ভ্যালেন্সিয়া এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে সর্বসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। জরুরি বিভাগের লোকজনের উদ্ধারকাজ, তল্লাশি এবং লজিস্টিক সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। লোকজনকে তাদের বাড়িতেই অবস্থানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে স্পেনের গণমাধ্যমগুলো জানায়, দেশটির রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ ও রানি লেটিজিয়া আজ রোববার (৩ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী সানচেজ এবং আঞ্চলিক নেতা কার্লোস মাজোনের সঙ্গে বন্যাদুর্গত ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চল পরিদর্শন করবেন।
শুধু ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে এই ভয়াবহ বন্যায় ২১০ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী এলাকা ক্যাসটিলা লা-মাঞ্চা ও আন্দালুসিয়া থেকেও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে এখনও অনেক মরদেহ টানেল ও মাটির নিচে থাকা কারপার্কে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।