তরমুজের বাজারে আগুন, ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি
রমজান আর বৈশাখের খরতাপকে কেন্দ্র করে আগুন লেগেছে কালো ও সবুজ তরমুজে। যে আগুনে নিম্নমধ্যবিত্ত তো দূরের কথা, মধ্যবিত্তরাই পুড়ে ছারখার। এক্ষেত্রে ফসলের মাঠে কৃষকের কাছ থেকে কেনার পরে পাইকারদের পাইকারি ভাব ও তদারকির অভাবের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
জেলার প্রতিটা স্থানে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করা হচ্ছে তরমুজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরমুজের ক্ষেতে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পিস হিসেবে কিনে নিয়ে এসে তারা সিন্ডিকেট করে কেজি মাপে ইচ্ছে মতো দাম হাঁকছেন। এতে তরমুজ বিক্রেতারা লাভবান হলেও ঠকছেন গ্রাহকরা।
এদিকে, গত কয়েক দিনের প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। দাবদাহ থেকে সামান্য পরিত্রাণ পেতে ইফতারে ধর্মপ্রাণ রোজাদাররা তরমুজই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু আকাশছোঁয়া দামের কারণে এখন আর তরমুজের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেররা। এরই মধ্যে তরমুজের দাম সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
এদিকে, ফরিদপুর জেলা প্রশাসন অভিযান শুরু করলেও থেমে নেই তাদের কেজিমাপে ইচ্ছে মতো দাম। অভিযানের পর তারা চলে যাওয়ার পর আগের মতোই তারা দাম নিচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে।
শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের জুয়েল নামে একজন বলেন, ‘ভাই, অনেক ইচ্ছা ছিল একটি তরমুজ কিনব। রোজার সময় বাড়ির সবাইকে নিয়ে ইফতারি করব। সেটা আর হলো না দামের কারণে।’
হাউজিংয়ের জাকির নামের একজন বলেন, ‘আমি দুটি তরমুজ কিনেছি। ছোট ছোট প্রতি পিস দাম পড়েছে তিনশ টাকা করে। এতো দামের কারণে তরমুজ আর সামনের দিনে কপালে আর জুটবে না। মাঠ পর্যায় থেকে সরাসরি সঠিক তদারকি প্রয়োজন তরমুজসহ প্রতিটি জিনিসের।’
একই চিত্র জেলার প্রতিটি উপজেলা শহরসহ হাট বাজারে। আলফাডাঙ্গা সদর বাজার, জাটিগ্রাম বাজার, গোপালপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি তরমুজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এখন সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। প্রতিটি বড় সাইজের তরমুজ ওজনে আট থেকে ১০ কেজি ও মাঝারি সাইজের তরমুজ ওজনে পাঁচ থেকে সাত কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। কোনো বিক্রেতা ওজন ছাড়া তরমুজ বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর বাজারে তরমুজ কিনতে আসা সোলাইমান হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে বাসায় বাচ্চারা তরমুজ খাবে। তাই বাজারে তরমুজ কিনতে এসে দেখি বিক্রেতা কেজিতে তা বিক্রি করছে। মাঝারি সাইজের একটি তরমুজ ২০০ টাকা বলেছি কিন্তু দিচ্ছে না। বিক্রেতার সাফ কথা কেজি মাপে যে দাম হয় সেই টাকা দিয়ে কিনতে হবে। তাই তরমুজ না কিনেই বাসায় ফেরত যাচ্ছি।’
আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী মিন্টু শেখ ও লাল্টু শেখ বলেন, ‘আমি একশো পিস তরমুজ ২৮ হাজার টাকা দিয়ে পাইকারি কিনে এনেছি। এখন ৬০ টাকা কেজি হিসেবে না বিক্রি করলে চালান বাঁচবে না।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলার জাটিগ্রাম বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘দাম না বেড়ে তো উপায় নেই। লোকডাউনের মধ্যে মহাজনদের কাছে গিয়ে তরমুজ আগের থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এছাড়া তীব্র গরম ও রোজার কারণে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও বেড়েছে।’
তবে সাধারণ মানুষের দাবি তরমুজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে অতিরিক্ত মূল্য দরে কেজিতে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। বাজার মনিটরিং করলে কেজি কাহিনি উন্মোচন হবে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিথী মিত্র, তানিয়া আক্তার এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখের যৌথ উদ্যোগে সোমবার ফরিদপুর ফল বাজার এলাকায় তরমুজের বাজারে অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন জেলা স্যানেটারি পরিদর্শক বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘কিছু সংখ্যক অসাধু তরমুজ ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লোভে কারসাজি করায় এবং তরমুজের বাজার যথাযথ বিধি মোতবেক যৌক্তিক মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।’
যথাযথ চলমান এই আদালত পরিচালনার সময় প্রান্তিক কৃষক থেকে আড়তদার ও খুচড়া বিক্রয়কারী তরমুজ ব্যবসায়ীদের পাকা রশিদ যাচাই বাছাই করে ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সচেতনামূলক জরিমানা করা হয়। সেইসঙ্গে ভোক্তাদের উপস্থিতে ব্যবসায়ীদের মোকামের সঠিক ক্রয়ের পাকা রশিদ চাহিবা মাত্র প্রদর্শন পূর্বক যৌক্তিক মূল্যে প্রতিটি তরমুজ পিস হিসেবে বিক্রয় করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে বিশিষ্টজনরা মনে করেন এই অভিযান কৃষক পর্যায় পরবর্তী থেকে হওয়া এবং পাইকারদের ওপর কঠোর নজরদারি পারে বাজারের স্থিতিশিলতা বজায় রাখতে।