মোংলায় তরমুজ সিন্ডিকেট বেপরোয়া, প্রশাসন নীরব
তরমুজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান ও জরিমানা করা হলেও একেবারে ভিন্ন চিত্র বাগেরহাটের মোংলায়। প্রশাসনের নীরবতায় এখানকার তরমুজ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এমনিতেই প্রচণ্ড গরম, তারপর রমজানের ইফতারিতে তরমুজের কদর সাধারণ একটু বেশি। তাই ক্রেতা সাধারণের কাছ থেকে সিন্ডিকেট চক্র কেজি দরে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এ যেন স্বাভাবিক ব্যবসা নয়, অধিক মুনাফা লাভের খেলা তরমুজ ব্যবসায়ীদের।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেছিলেন, ‘খুব শিগগিরই তরমুজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।’ তবে তাঁর এমন কথার পরও পেরিয়ে গেছে কয়েকদিন।
মোংলা পৌর শহরের বাজারে তরমুজের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের রয়েছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। পাইকারী ব্যবসায়ী মো. বাবুল জানান, পটুয়াখালীর গলাচিপা এবং খুলনার বাজুয়া থেকে তারা ১৬০ টাকা পিস দরে তরমুজ কেনেন। এরপর মোংলা বন্দরের খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে তা ১৮০ টাকা পিস দরে বিক্রি করেন। এইভাবে তিনি এই মৌসুমে এ পর্যন্ত ১৬ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন।
তবে পাইকারী ব্যবসায়ী বাবুল মিথ্যা বলেছেন দাবি করে তরমুজের খুচরা ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা ১২০০ টাকা দরে এক মণ তরমুজ কিনে তা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি।’
একই বক্তব্য দেন অন্য দুই খুচরা ব্যবসায়ী সুশান্ত ও শাহাবুদ্দিন। তারা বলেন, ‘১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে কিনতে হয়। এই পাইকারী ব্যবসায়ীরা একটা বড় সিন্ডিকেট। এই দলে আছেন বাবুল, বাচ্চু, মোয়াজ্জেম, মাসুম, শামিম, মোশারেফ, ইব্রাহিম, শাহালম ও সিরাজ। এরাই মূলত মোংলা বন্দর ও পৌর শহরে যেকোনো মৌসুমী ফল সিন্ডিকেট করে বিক্রি করেন।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সিন্ডিকেট চক্র জানান, সিন্ডিকেট নয়, একসঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা করেন তারা।
সাধারণ ক্রেতা শাহজাহান সিদ্দিকী বলেন, ‘সারা দিন রোজা রেখে ইফতারিতে একটু তরমুজ না হলে হয় না। তাই প্রতিদিনই তাদের বেশি দামে তরমুজ কিনে খেতে হচ্ছে উপায় নাই। প্রশাসন এক্ষেত্রে একটু ব্যবস্থা নিলে আমরা সঠিক দামে তরমুজ কিনতে পারতাম।’
মোংলা উপজেলা বাজার মনিটরিং কমিটির সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলম শেখ বলেন, ‘কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী তরমুজ কেজিতে সর্বোচ্চ তিন থেকে পাঁচ টাকা লাভ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখানে সেটা হচ্ছে না। পিস হিসেবে তরমুজ কিনে ক্রেতাদের কাছে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এটা সুস্পষ্ট প্রতারণা। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় প্রতিনিয়তই সাধারণ ক্রেতারা এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।’
বাজার মনিটরিংয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘তরমুজ ব্যবসায়ীদের শুক্রবার বিকেলে ডাকা হয়েছে। সেখানে তাদের নিয়মনীতি বলে দেওয়া হবে। সেই নিয়ম নীতি না মানলে তারপর থেকে কঠোর অভিযান চালানো হবে।’