জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ‘অকৃতকার্য’ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে দুয়েকটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া স্নাতক (অনার্স) শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শ্রেণির ভর্তিসহ সাতটি দাবিতে এ বিক্ষোভ করেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বোর্ড বাজারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শুরু হয়। দুপুর পর্যন্ত তিতুমীর কলেজ, নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মানিকগঞ্জ, নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ নাটোর, বোরহানউদ্দিন পোস্টগ্রাজুয়েট কলেজ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজসহ দেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী আনসার সদস্যদের ধাক্কা-ধাক্কি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
কর্মসূচির সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে চাইলে ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা তার গাড়ির গতিরোধ করেন। এ সময় তাঁরা তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য স্লোগান দিতে থাকেন এবং অনেকে ভিসির গাড়ির সামনে সড়কের ওপর শুয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে ভিসি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভিসি বলেন, ‘বিগত তিন বছর ছাত্রদের সব সমস্যা সমাধানের জন্য, সেশনজট দূর করার জন্য, নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য, ফলাফল তিন মাসের মধ্যে ঘোষণা করার জন্য দিন-রাত আমরা পরিশ্রম করছি। এখন তো ফলাফলের জন্য তোমাদের অপেক্ষা করতে হয় না। শিক্ষাজীবন ঝরে যায় না।’
ভিসি আরো বলেন, ‘ছাত্রদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বাত্মকভাবে সব সময় চেষ্টা করি। এর জন্য অবরোধের প্রয়োজন নেই, বসে থাকার প্রয়োজন নেই। এখানে আসারও প্রয়োজন নেই।’ তিনি আগামী ১৭ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা শুনে তা সমাধান করার কথা বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভিসির কথা না শুনে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে মঙ্গলবারই তাঁদের সমস্যা সমাধানের জন্য ভিসির প্রতি দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে ভিসি তাঁর গাড়িতে উঠে স্থান ত্যাগ করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা ফের তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সরাতে গেলে ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ভিসি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশে চলে যান।
এরপর শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আনসার সদস্যদের লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে শিক্ষার্থীদের চলে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও শিক্ষার্থীরা তা মানেনি। পরে দুপুর ২টার দিকে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে সরিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নতুন ও বর্ধিত সিলেবাসে স্নাতক (অনার্স) পড়া শুরু করেন তাঁরা। আগে তাঁদের গড়ে প্রতি বিষয়ে ৩৫ নম্বর পেলেই তাঁদের পরীক্ষায় কৃতকার্য দেখানো হতো। কিন্তু এখন সিজিপিএ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিলেবাস পরিবর্তন, বর্ধিতকরণ ও নতুন শর্ত প্রয়োগ করতে থাকে। তা ছাড়া সিলেবাসবহির্ভূত প্রশ্নপত্রের আলোকে পরীক্ষা এবং এক শ্রেণির শিক্ষকের উত্তরপত্র মূল্যায়নে চরম অবহেলা ও অসামঞ্জস্যতার কারণে শিক্ষার্থীদের বিশাল একটি অংশ অকৃতকার্য হয়েছে। প্রায় চার হাজার ৩০০ শিক্ষার্থীদের জীবন এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, সেশনজটের কবলে পড়ে চার বছরের কোর্স ছয় বছরে শেষ করতে হয়েছে। তাই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন, পরিবার ও ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে স্নাতকোত্তর ভর্তির নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করেন তাঁরা।