পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় ক্যাপমিনাফ
নানা সমস্যায় অস্বাভাবিক পতনে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন। এতে সর্বস্বান্ত হয়ে অনেকেই পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিনিয়োগ কমে গিয়ে ধীরে ধীরে পুঁজিবাজার রসাতলে যাচ্ছে এমন দাবি করেন পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন (ক্যাপমিনাফ)। আজ বুধবার (২৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এমন কথা বলেন। এসময় বর্তমান পুঁজিবাজারের মন্দা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ চান তারা।
বর্তমানে অনেক বিনিয়োগকারীর অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে পুঁজিবাজারে মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মো. রুহুল আমিন আকন্দ বলেন, শুধু তা-ই নয়, পুঁজিবাজার নিচে চলে আসায় অনেক অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন অবস্থায় যদি আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) বাজেটে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ওপর গেইনট্যাক্স আরোপ করা হয় তবে ওই টাকাগুলো হয়তো আর বাজারে আসবে না। যা পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে মন্দার সৃষ্টি করবে।
পুঁজিবাজারের প্রতি বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আস্থা একেবারে শূন্যের কোঠায় জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে সরকারকে। কলসির নিচে ফুটো থাকলে পানি যতই ঢালা হোক কলসি ভরবে না। কলসির ফুটোর মতো পুঁজিবাজারের টাকা বের হয়ে যাওয়ার ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। তবেই বাজার দীর্ঘমেয়াদে ভালো হবে।
বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর পুঁজিবাজারে যে অনিয়ম হয়েছে তারই ফলাফল এখন ভোগ করছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
আরও বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অব্যবস্থাপনা, বন্ধ কোম্পানির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা, সিন্ডিকেট করে প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া, বন্ধ কোম্পানির ডিরেক্টররা ভুয়া এবং আকর্ষণীয় মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের শেয়ারগুলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধরিয়ে দিয়ে পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে অসাধুরা। এসব অনিয়মের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লসে ও নানা কষ্টে পুঁজিবাজার থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা বিনিয়োগকারীাদের আস্থা বাড়ানো সহ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একগুচ্ছ দাবিদাবা তুলে ধরেন। যেসব দাবি সংগঠনের নেতারা তুলে ধরেন, সেগুলো হলো- আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা থাকা; আগামী এক বছর সব ধরনের আইপিও অনুমোদন বন্ধ ঘোষণা; টেকনো ড্রাগসের আইপিও বন্ধ করা; ক্যাপিটাল গেইনট্যাক্স আরোপ না করা; বাইব্যাক আইন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া; শেয়ারের দাম বাড়লে যেমন কারণ দর্শানো হয়, তেমনি দাম কমলেও যেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার ব্যবস্থা করা; পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের ইস্যু দেখিয়ে যেসব কোম্পানির শেয়ার দর আকাশচুম্বী করা হয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া; মিউচ্যুয়াল ফান্ড উন্নয়নে দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আর্থিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নো লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া; ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড বাজার উন্নয়নে ব্যবহার; পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা তহবিল গঠন; স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুঁজিবাজার ও স্বচ্ছতা আনতে বিএসইসিতে বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করা; আসন্ন বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ সম্পূর্ণ নিঃশর্তভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা থাকা।